সরল বিশ্বাস
দিনটা কিছুটা যেন নিঃশব্দেই আসে। আবার নিঃশব্দে পেরিয়েও যায়। আসলে, পয়লা মে এলেই বাঙালি ছুটির আমেজে চলে যায়। পরের দিন, অর্থাৎ ২ মে খবরের কাগজ থাকে না। ফলে, সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিনটা আর খেয়ালই থাকে না।
পরপর দু’দিন বাংলার দুই কিংবদন্তির জন্মদিন। একদিন মান্না দের, পরের দিন সত্যজিৎ রায়ের। দু’জনেই শতবর্ষ পেরিয়ে এসেছেন। আসলে, মে মাসের শুরুর সময়টাই বড় অদ্ভুত। কখনও বিধানসভা, কখনও পঞ্চায়েত, কখনও লোকসভা— ভোটের আবহ যেন লেগেই থাকে। বাঙালির ভোট চর্চা পেলে আর কী চাই! তখন কে মান্না দে, আর কেই বা সত্যজিৎ রায়!
এবার যদিও ভোট নেই। ভোট নেই তো কী হল, যুদ্ধ আছে! কয়েকদিন ধরে টিভি খুললেই যেন একটা যুদ্ধ–যুদ্ধ আবহ। এই বুঝি ভারত যুদ্ধে নেমে পড়ল। কানফাটানো চিৎকার। নিজের ব্যর্থতা আড়াল করতে শাসকের একটাই অস্ত্র, যুদ্ধের জিগির তোলো। ‘দেশপ্রেম’ এর বন্যা বইয়ে দাও। সেই ট্রাডিশন এখনও চলছে। কেন্দ্রের আছে যুদ্ধজিগির, আর রাজ্যের আছে ‘জয় জগন্নাথ’। মোদ্দা কথা, নজর ঘুরিয়ে দাও, ভুলিয়ে দাও।
আচ্ছা, সত্যজিৎ রায় যুদ্ধ সম্পর্কে ঠিক কী ভাবতেন? একটা গানের লাইনেই তাঁর মনোভাব স্পষ্ট করেছিলেন, ‘তোরা যুদ্ধ করে করবি কী তা বল!’ কিন্তু হল্লারাজাকে এই প্রশ্নটা কে আর করে! প্রশ্ন করলেই আরপনি দেশদ্রোহী। রাজ্য চুলোয় যাক, সুশাসন চুলোয় যাক, ‘হল্লা চলেছে যুদ্ধে।’
এই কারণেই সত্যজিৎ রায়কে স্মরণ করা যেন আরও জরুরি। সেই কতকাল আগে তিনি সতর্ক করে দিয়েছিলেন। আমরা বুঝিনি। বোঝার চেষ্টাই করিনি। আমরা ফেসবুকে তাঁর একটা ছবি সাঁটিয়ে দিয়েই দায় শেষ করি। বড়জোর হোয়াটসঅ্যাপের প্রোফাইল ছবিটা একটু বদলে ফেলি। তাঁর একটা গানের দৃশ্য দিয়ে তাঁকে ধন্য করি।
কিংবদন্তি পরিচালককে কীভাবেই বা স্মরণ করতে পারি! বেশি কিছু করার দরকার নেই। তাঁর ছবি তো আর খুব দুষ্প্রাপ্য নয়। অন্তত ইউটিউব থেকে একটা ছবি দেখা যায়। হয়তো আগে দেখা, তবু না হয় আবার দেখলেন। তাঁর অনেক ছোট গল্প, উপন্যাস অডিও বুক হয়ে ঘুরে বেড়ায়। বই পড়ায় যদি সত্যিই অ্যালার্জি থেকে থাকে, না হয় একটা বা দুটো অডিও বুক শুনলেন। ফোনের দিকে তাকিয়ে কত সময়ই তো নষ্ট হয়। না হয় একদিন সেটা সত্যজিৎ চর্চায় লাগালেন।
আর যদি মনে হয়, একদিন কেন, মাঝে মাঝেই তো তাঁকে স্মরণ করা যেতে পারে, মাঝে মাঝেই তো তাঁর ছবি দেখা যেতে পারে, তাহলে তো আর কথাই নেই। স্বয়ং সত্যজিৎ ধন্য হবেন। স্বর্গ থেকে নেমে এসে বলবেন, ‘বাস কর পাগলা, রুলায়গা ক্যা!’