হরিশ মুখার্জি
মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়। রাজনীতির খুব চেনা একটা স্লোগান। আমাদের রাজ্যের বিজেপি অনেকটাই দিল্লি নির্ভর। সব ব্যাপারেই তাঁরা দিল্লির মুখাপেক্ষী। তাঁরাও চেয়ে থাকেন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহর দিকে। অনেকেই মনে করেন, নরেন্দ্র মোদি একটা জনসভা করলেই হয়তো হাওয়া ঘুরে যাবে।
সত্যিই কি তাই? এই রাজ্যের বিজেপির জন্য মোদি সত্যিই কি সম্পদ? নাকি মস্তবড় এক বোঝা? সেই প্রশ্নটা এবার তোলার সময় এসেছে। অন্য রাজ্যে বিজেপি দল ভাঙিয়ে সরকার গড়ে। কেন্দ্রের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে অন্যের নির্বাচিত সরকারকে ফেলার নজির কম নেই। কিন্তু দিল্লির বিজেপি কোনও এক অদৃশ্য কারণে এই রাজ্যের তৃণমূলকে লালন পালন করে। তাঁরা মুখে ‘দিদি, ও দিদি’ বলে চিৎকার করেন। অমিত শাহ, ‘আব কী বার দোশো পার’ বলে স্লোগান তোলেন। কিন্তু এই রাজ্যে তৃণমূলকে সরানোর কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ চোখে পড়ে না।
অন্তত আরজি কর কাণ্ডের পর এটা আরও বেশি করে পরিষ্কার। সব তদন্তে সিবিআই যেভাবে ছড়িয়ে লাট করে, এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হল না। এই সিবিআই কি সত্যি আর রাখার দরকার আছে? শিয়ালদা কোর্টে শুনানি হয়েছে। যে কোনওদিন রায় ঘোষণা হয়ে যাবে। কী রায় হবে, এখনই বলে দেওয়া যায়। অপরাধী শুধুমাত্র সঞ্জয় রায়, এটাই ঘোষণা হবে। হয়তো ফাঁসির নিদানও হতে পারে। তাহলে এত তদন্তের কী দরকার ছিল? অনেকে হয়তো শুধু সিবিআইকেই দোষারোপ করবেন। কিন্তু দিল্লি বাবুদের নির্দেশ ছাড়া সিবিআই তদন্তের নামে এমন প্রহসন করতে পারত? সারদা, নারদা, নিয়োগ দুর্নীতি, কয়লা, গরুতে তৃণমূলকে বাঁচাচ্ছেন, এই পর্যন্ত ঠিক ছিল। এমন নির্মম কাণ্ডের পরেও তৃণমূলকে বাঁচানোর এত তাগিদ? শুধু সঞ্জয়কে বাঁচানোর জন্য এত প্রমাণ লোপাট করতে হল! সঞ্জয় নয়, ঘৃণা যদি করতে হয়, তাহলে যাঁরা সিবিআই–কে চালায়, তাঁদের করুন।
অন্য রাজ্যে সিবিআই, ইডি কত সক্রিয়। অথচ, এই রাজ্যের বেলায় তা ভয়ঙ্করভাবে নিষ্ক্রিয়। যেটার তদন্ত করলে সাতদিনও লাগার কথা নয়, সেই তদন্ত করতে বছরের পর বছর লাগিয়ে দেয়। তারপর বিস্তর তদন্ত করে এই সিদ্ধান্তে আসে, রাজ্য সরকার সহযোগিতা করছে না। আরে বাবা, রাজ্য সহযোগিতা করবে না বলেই তো কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। সিবিআই, ইডি কাজের কাজ কিছু তো করেই না, উল্টে নিজেদের হাসির খোরাক বানিয়ে ছাড়ে। তৃণমূলের প্রভাবশালীরা জানেন, সিবিআই কাঁচকলা করবে। সেটাই তাঁরা প্রকাশ্যে বলেন। কেন বলেন? কারাণ, তাঁরা সত্যিই জানেন, সিবিআইয়ের সত্যিই কোনও মুরোদ নেই।
ঠিক তেমনই হল নির্বাচন কমিশন আর কেন্দ্রীয় বাহিনী। আরও দুই অশ্বডিম্ব প্রসবকারী। ভোটের আগে যত তর্জন, গর্জন। ভোটের সময় টিঁটিকিও খুঁজে পাওয়া যায় না। কোন লোকসভা আসনে সবথেকে বেশি সন্ত্রাস হবে, সবাই জানতেন। সেখানে বাহিনীর ভূমিকা কী ছিল? সুপার ফ্লপ বলতে যা বোঝায়, তাই। খোদ কলকাতায় বরানগর উপনির্বাচনে ভোট চলাকালীন একদল হুলিগান কিনা বিজেপির পার্টি অফিসে ভাঙচুর চালাল! রাজ্য পুলিশ কিছু করবে না, এ তো জানা কথা। কিন্তু ভোটের দিন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার বা ব্যবস্থা নেওয়ার দায় তো নির্বাচন কমিশনের। কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকা সত্ত্বেও এমন ভাঙচুরের সাহস পেল কোথা থেকে? কারণ, যাঁরা ভাঙচুর চালাচ্ছেন, তাঁরাও জানেন, এই কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোনও ক্ষমতাই নেই।
গণনার দিনও সেই ছবিটাই দেখা গেল। সকাল আটটার মধ্যে বিজেপির সব এজেন্টকে ও প্রার্থীকে মেরে বের করে দেওয়া হল। কাউন্টিং তো আর প্রত্যন্ত এলাকায় হয় না। সে ঘরটুকুতেও কেন্দ্রীয় বাহিনী কোনও নিরাপত্তা দিতে পারল না! ধিক এই অকেজো কেন্দ্রীয় বাহিনীকে।
আবার সেই এক প্রশ্ন। কেন্দ্রীয় বাহিনীতে এতখানি উপেক্ষার স্পর্ধা আসে কোথা থেকে? আসে, কারণ কেন্দ্রীয় বাহিনী যাঁরা চালান, তাঁরা এই রাজ্যের ক্ষেত্রে ঠুঁটো জগন্নাথ।
হ্যাঁ, মোদি কখনও সম্পদ হতে পারেন না। মস্তবড় এক আপদ। তিনিই তৃণমূলের আর এই দুর্বৃত্তদের আসল রক্ষাকর্তা। এই সহজ সত্যিটা বিজেপি কর্মীরা যত দ্রুত বোঝেন, ততই মঙ্গল।
মোদি মোটেই সম্পদ নন, আস্ত বোঝা, বঙ্গ বিজেপি কবে যে বুঝবে!