রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, একাকী গায়কের নহে তো গান। একটি গানের আড়ালে অনেকেই থেকে যান। গানটি কে গাইছেন, তা নিয়ে আমরা মাতামাতি করি। কিন্তু কে লিখলেন, কে সুর দিলেন, সেদিকে আমাদের তেমন মন থাকে না। আর বাদ্যযন্ত্রীদের কথা তো না হয় ছেড়েই দিলাম।
তেমনই একজন আড়ালে থাকা মানুষ হলেন সলিল চৌধুরি। এবার তাঁর জন্ম শতবর্ষ। তাঁর লেখা, তাঁর সুর দেওয়া এত এত গান আমরা গুনগুন করি। অথচ, এগুলো যে তাঁরই লেখা ও সুর দেওয়া, আমরা অনেকেই জানি না।
একদিকে পাশ্চাত্য সঙ্গীত, অন্যদিকে বাংলার লোকসঙ্গীত। দুটোকে কী অদ্ভুতভাবে মিশিয়েছিলেন। কোন গানের সঙ্গে কোন ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজবে, তা নিয়ে তাঁর যে পরীক্ষা নিরীক্ষা, তা সত্যিই অবাক করার মতো। কখনও তিনি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতায় সুর বসিয়ে নির্মাণ করছেন ‘রানার’, আবার কখনও নিজেই লিখছেন, ‘কোনও এক গাঁয়ের বধূ’। উত্তাল সময়ে জন্ম নিচ্ছে একের পর এক গণসঙ্গীত। আবার হিন্দি ছবিতেও সুরের জগতে আনছেন নতুন দিগন্ত। তাঁর সুরে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকার, মান্না দে, মুকেশ, কিশোর কুমাররা গাইছেন একের পর এক কালজয়ী গান। শুধু তাই নয়, বলিউডের এই কিংবদন্তিদের বাংলাতেও গান গাইয়েছেন। শোনা যায়, কেরলে নাকি তাঁকে এখনও দেবতার মতো পুজো করা হয়।
অ্যালবামের গানেও যেমন সফল। তেমনই সফল ছবির গানে। গণসঙ্গীতে যেমন ছাপ ফেলেছেন, তেমনই বলিউডি গানেও। রাগপ্রধান গানে যেমন দখল, তেমনই গ্রামগঞ্জে খুঁজে বেড়িয়েছেন লোক গানের সুর। সুরের এমন বৈচিত্র্য আর কজনের মুকুটে ছিল?
এর পরেও বলতে হবে, বাংলা ছবির দুনিয়া তাঁকে সেভাবে ব্যবহার করতে পারল না।