রক্তিম মিত্র
কে কতখানি বাংলাদেশ বিরোধী, এখন যেন তার প্রতিযোগিতা চলছে। কেউ ঘোষণা করছেন, পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে কোনও পণ্য যেন বাংলাদেশে না ঢোকে। আবার কোনও ডাক্তার ঘোষণা করছেন, তিনি এবার থেকে আর বাংলাদেশের কোনও রোগী দেখবেন না। কেউ বলছেন, বাংলাদেশের লোকেদের জিনিস বিক্রি করব না। কেউ বলছেন, বাংলাদেশের পর্যটকদের হোটেলে জায়গা দেব না।
এঁরা সবাই মহান দেশপ্রেমী। সুযোগ পেয়েছেন। এই সুযোগে দেশপ্রেম জাহির না করলে চলে! শুধু সিদ্ধান্ত নিয়েই ক্ষান্ত নন। মিডিয়ায় ঘটা করে জানান দিতে হবে। মিডিয়া পাত্তা না দিলে! ফেসবুক তো আছে। সেখানেই দেখাতে হবে, দেখো, আমি কেমন দেশপ্রেমী।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে, এটা নতুন কোনও ঘটনা নয়। ধর্মের নামে কোথাও কোথাও নির্যাতন চলছে, এটাও ঘটনা। তদারকি সরকার কড়া অবস্থান নেওয়ার বদলে সেই ধর্মোন্মাদদের কোথাও কোথাও মদত দিচ্ছে, এটাও ঘটনা। কিন্তু গোটা বাংলাদেশের সবাই সাম্প্রদায়িক, এমনটা দাগিয়ে দেওয়া কি একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না! আমাদের দেশে যেমন ফেসবুক বিপ্লবীর অভাব নেই, বাংলাদেশেও তাই। সেখানেও প্ররোচনা দেওয়ার, ফেসবুকে হুমকি দেওয়ার লোক প্রচুর। তাদের দেখে একটা গোটা জাতিকে ভারতবিরোধী বলে দাগিয়ে দেবেন! যাঁরা সারাক্ষণ ফেসবুকে বুঁদ হয়ে থাকেন, তাঁদের কাছে অবশ্য এটাই প্রত্যাশিত।
একবার ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন তো, কে আপনাকে ওসকাচ্ছে। সেই দেশে যেমন উসকানি দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রশক্তি আছে, এই দেশের ছবিটাও আলাদা কিছু নয়। এখানেও সেই শাসক দলই ঘৃণা ছড়াচ্ছে। আর জেনে হোক, না জেনে হোক, আপনি সেই উসকানির শিকার হচ্ছেন। সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ নিন্দনীয়? সংখ্যালঘুদের নামে ঘৃণা ছড়ানো নিন্দনীয়? এমনটা মনে করেন তো? তাহলে বাইরের দেশ পরে দেখবেন। আগে নিজের দেশের দিকে তাকান। আমাদের প্রধানমন্ত্রী, আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরাও কি সেই কাজটাই দিনের পর দিন করে আসছেন না?
একদল মসজিদ ভাঙল। আমার দেশের সিবিআই, আমার দেশের সরকার, আমার দেশের আদালতের ভূমিকা কী ছিল? খুব গর্ব করার মতো ছিল কি? যিনি মসজিদ ভাঙার মূল অভিযুক্ত, তিনি বেকসুর খালাস হলেন, ভারতরত্ন পেলেন। আর যে বিচারপতি এই রায় দিলেন, অবসর নিতে না নিতেই তাঁর প্রোমোশনাল পোস্টিং হয়ে গেল। আমরা তারপরেও ধেই ধেই করে সেই দলকে ভোট দিয়েছি। আমরা কোন মুখে বাংলাদেশের সমালোচনা করব?
এতদিন শুনে আসতাম, ভারতকে নাকি সবাই ভয় পায়। আমেরিকা, চীন, জাপান সবাই নাকি ভারতকে ভয় পাচ্ছে। গত কয়েকমাসে অন্তত এটুকু বোঝা গেল, পাশের পুঁচকে রাজ্য বাংলাদেশও মোদিকে পাত্তা দেয় না। তাঁদের সরকারের কর্মকাণ্ড অবশ্যই নিন্দনীয়। কিন্তু তাঁরা যে ভারতকে বিশেষ পাত্তা দিচ্ছে না, এটা অন্তত পরিষ্কার। কিন্তু তারপরেও তাঁর নামে জয়ধ্বনি ওঠে। তিনি নিজেই নিজের ঢাক পেটান। সেই প্রচারকে তারস্বরে নিয়ে যাওয়ার জন্য মিডিয়া সেল তো আছেই। আর আপনি, বুঝে হোক, না বুঝে হোক, তাতে গলা মেলান। ভাবেন, আপনি বিরাট দেশপ্রেমী।
আসলে, আপনি একবার ‘দেশপ্রেমী’ হয়ে গেলেই অনেকের অনেক ব্যর্থতা চাপা পড়ে যায়।