মীনাক্ষী এমন পোস্ট করতে পারেন!‌ এই চিনলেন!‌

রক্তিম মিত্র

রোজ নতুন নতুন বিতর্ক যেন সামনে আসছে। হঠাৎ করে একটি স্ক্রিনশট ভাসিয়ে দিলেন কুণাল ঘোষ। সেখানে দেখা যাচ্ছে, মীনাক্ষী মুখার্জির অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ছবি পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে ফিরহাদ হাকিমের একটি ছবিকে বিকৃত করে তা পোস্ট হয়েছে। আপাতভাবে দেখে মনে হতেই পারে, অত্যন্ত নিম্নরুচির পরিচয় দিয়েছেন মীনাক্ষী। সত্যিই তো, ধর্মীয় উস্কানিমূলক এমন পোস্ট কি তাঁকে মানায়?‌

এটা যদি তৃণমূলের অন্য কোনও মুখপাত্র পোস্ট করতেন, খুব একটা অবাক হতাম না। কারণ, কোনটা ঠিক কোনটা ফেক এটুকু যাচাই করার মতো বিদ্যেবুদ্ধি বা বিচক্ষণতা তাঁদের থাকার কথাও নয়। কিন্তু কুণালবাবু তো নিছক মুখপাত্র নন। দীর্ঘদিনের একজন সাংবাদিক। কোনটা আসল, কোনটা নকল, এই ফারাকটা তিনি বেশ ভালই বোঝেন।

মীনাক্ষী তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হতে পারেন। তিনি মীনাক্ষিকে এবং মীনাক্ষী তাঁকে রাজনৈতিকভাবে আগেও আক্রমণ করেছেন। কিন্তু কোনটা মীনাক্ষী করতে পারেন আর কোনটা করতে পারেন না, এটুকু বোঝার মতো বিচক্ষণতা কুণালবাবুর নেই, এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। মীনাক্ষীর রুচিবোধের সঙ্গে এই জাতীয় পোস্ট কখনই খাপ খায় না, এটা কুণালবাবু বোঝেন না?‌ তারপরেও কেন বিকৃত পোস্ট নিয়ে বাজার গরম করার এই চেষ্টা?‌

বিষয়টা শুধু কুণালবাবুতেই থেমে থাকল না। তৃণমূলের আরেক টিভি মুখাপাত্র অরূপ চক্রবর্তী, তিনিও এই স্ক্রিনশট পোস্ট করে বসলেন। এই মানুষটি তৃণমূলের বাকিদের তুলনায় কিছুটা শিক্ষিত মুখ। তিনিও এমন ফেক একটা পোস্টকে স্ক্রিনশট হিসেবে ব্যবহার করলেন!‌ শাসকদলে থাকলে অনেক বেশি দায়িত্বশীল হতে হয়, এই মুখাপত্রদের সেটা কে বোঝাবে?‌

বিপক্ষের কোন রাজনীতিক কোনটা করতে পারেন আর কোনটা করতে পারেন না, এই নিয়ে যাঁদের সম্যক ধারণা নেই, তাঁরা কিনা দলের মুখপাত্র!‌ একটা ফেস পোস্ট বা ফেক ভিডিও নিয়ে চায়ের দোকানে এঁড়ে তর্ক হতে পারে। ফেসবুকে খিল্লি চলতে পারে। তাই বলে সেটাকে ইস্যু বানানো!‌ শাসক দল নিজেদের আর কোন নর্দমায় নামাতে চায়!‌

বামেরা যতই শূন্য পাক, তৃণমূলের সঙ্গে শিক্ষা ও রুচিবোধের তফাত ছিল, আছে, থাকবে। এই সহজ সত্যিটা কুণালবাবুরা সবথেকে ভাল জানেন। মীনাক্ষীর বক্তৃতা বা ইন্টারভিউ শুনেছেন?‌ কখনও এমন ধর্মীয় উস্কানিমূলক একটা লাইন বলতে শুনেছেন?‌ কখনও কোনও অশালীন কথা বলতে শুনেছেন?‌ কথাবার্তা ও আচরণ যথেষ্ট মার্জিত। ভদ্রতা ও শিষ্টাচারের নিরিখে মীনাক্ষীর একশো মাইলের মধ্যেও তৃণমূলের কাউকে রাখা যায় না।

শাসক দল এত মিথ্যাচারের অনুপ্রেরণা কোত্থেকে পায়, কে জানে!‌ ওটা মীনাক্ষীর পোস্ট হতেই পারে না। সাধারণ বোধ বুদ্ধি থেকেই এটা বলা যায়। যার এই বোধটুকু নেই, তাকে বড়জোর করুণা করা যায়। আচ্ছা, সরকার তো চাইলেই তদন্ত করতে পারে, এটা কোন জায়গা থেকে পোস্ট হয়েছে। এবং এটা বের করতে পুলিশের এক ঘণ্টার বেশি লাগা উচিতও নয়।

মীনাক্ষী নিজে লালবাজারে গিয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। তদন্তের আর্জি জানিয়েছেন। এই ফেক প্রোফাইল কে বানিয়েছে, কোন ফোন থেকে বানানো হয়েছে, তা পুলিশ দ্রুত খুঁজে বের করুক। এটা যেন অনন্তকাল ঝুলিয়ে না রাখা হয়। যদি একদিনের মধ্যে তা সামনে না আসে, তাহলে সেটা পুলিশের লজ্জা। এবং অবশ্যই পুলিশমন্ত্রীর লজ্জা।

মুখ্যমন্ত্রী বা অভিষেক ব্যানার্জির এরকম একটা ফেক প্রোফাইল বানিয়ে যদি কেউ কিছু পোস্ট করত, আর সেই পোস্ট নিয়ে বিপক্ষ যদি বাজার গরম করতে চাইত, তাহলে পুলিশের ভূমিকা কী হত?‌ এক ঘণ্টার মধ্যে সেই ফেক প্রোফাইল নির্মাতাকে ধরে ফেলা হত। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় প্রেস কনফারেন্স হয়ে যেত। কিন্তু এক্ষেত্রে তেমন কিছুই হবে না। কারণ, যে ভুয়ো প্রোফাইল বানিয়েছে বা পোস্ট করেছে, সে জানে, পুলিশ তাকে ছুঁতেও পারবে না। যে মুখপাত্ররা এই ভুয়ো পোস্ট নিয়ে বাজার গরম করছেন, তাঁরাও বিলক্ষণ জানেন, পুলিশ আর এগোবে না।

সত্যিই, পুলিশের অপদার্থতার প্রতি শাসকদলের কত আস্থা!‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.