Categories খেলা

এ যেন কুড়িয়ে বাড়িয়ে বিশ্বকাপ

পৃথিবীর চারভাগে/‌ তিনভাগ জল/‌ ক্রিকেট তুচ্ছ খেলা, /‌খেলা ফুটবল। চারলাইনের ছোট্ট ছড়া। আসল ছবিটা যেন বুঝিয়ে দিয়েছিল। বছর দুই আগেই হয়ে গেল বিশ্বকাপ ফুটবল। আমরা সেই বিশ্বকাপের মানচিত্র থেকে আলোকবর্ষ দূরে। কিন্তু আমরাও রাত জাগি। আমরাও প্রিয় দলের জার্সি গায়ে খেলা দেখি। আমরাও প্রিয় দল, প্রিয় তারকাদের হয়ে চিৎকার করি। দুয়ারে কড়া নাড়ছে ইউরো কাপ। কদিন যেতে না যেতেই এসে যাবে কোপা আমেরিকা। বাঙালি আবার বিভক্ত হয়ে যাবে ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনায়।
চলছে টি২০ ক্রিকেট বিশ্বকাপও। কয়েকমাস আগেই ভারতের মাটিতে হয়ে গেল বিশ্বকাপ। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটা বিশ্বকাপ। শুধু পঞ্চাশ ওভারের বদলে কুড়ি ওভার। কদিন আগেই হয়ে গেল আইপিএল। দু’‌মাস ধরে চলল মহাযজ্ঞ। এত লাগাতার ক্রিকেটের জন্যই হয়তো আমজনতার সেই আগ্রহ নেই। বারোমাস ক্রিকেট কাঁহাতক আর ভাল লাগে! হয়তো সেই কারণেই বিশ্বকাপকে ঘিরে বাসে, ট্রেনে, মেট্রোয়, কলেজে, চায়ের দোকানে সেই চর্চা নেই। সেই বিতর্কও নেই।
থাকার কথাও নয়। গ্রুপ লিগে ভারত খেলছে কাদের বিরুদ্ধে?‌ পাকিস্তান বাদ দিলে তেমন কোনও শক্ত প্রতিপক্ষ নেই। আয়ারল্যান্ড, আমেরিকা, কানাডা এইসব দলের বিরুদ্ধে খেলতে হচ্ছে। অবশ্য চারটি গ্রুপেরই একই অবস্থা। দুটি করে দেশ আছে, যারা মোটামুটি ক্রিকেটটা খেলতে জানে। আর তিনটি করে দেশ আছে, যাদের দেশে ক্রিকেট খেলার সেই প্রচলনই নেই। সেই দেশের আমজনতার মধ্যে ক্রিকেটকে নিয়ে কোনও উন্মাদনা তো দূরে থাক, হাতেখড়িটুকুও হয়নি। একসময় বলা হত, ক্রিকেট খেলে পাঁচ–‌ছটা দেশ। বাকিদের কুড়িয়ে বাড়িয়ে ডেকে এনে বিশ্বকাপে খেলাতে হয়। এবারের বিশ্বকাপে দলের সংখ্যা কুড়ি। প্রথম সারির সাত–‌আটটি বাদ দিলে বাকি একডজন সেই কুড়িয়ে বাড়িয়ে আনা টিম। উগান্ডা, পাপুয়া নিউ গিনি, নেপাল— এইসমস্ত দেশও ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলছে। ভাবা যায়!‌
তবে, আমেরিকার মাটিতে বিশ্বকাপ আয়োজন একটা সাহসী সিদ্ধান্ত। নিউ ইয়র্কে মানুষ ক্রিকেট দেখতে আসছেন, মাঠ ভরাচ্ছেন, এটা বেশ আশাব্যঞ্জক। আমেরিকায় ক্রিকেট প্রসারের চেষ্টাটা মোটেই নতুন নয়। ১৯৩২ এ ডন ব্র‌্যাডম্যান এসে আমেরিকায় ক্রিকেট খেলে গেছেন। তখনও ক্রিকেটকে প্রসারের একটা চেষ্টা হয়েছিল। যদিও তা সফল হয়নি। আবার নতুন করে সেই চেষ্টা শুরু হয়েছে। আইসিসি বুঝেছে, ক্রিকেটের সঙ্গে মার্কিন মুলুককে জুড়তে পারলে, তবেই এই খেলার যথার্থ প্রসার ঘটবে। নিউ ইয়র্কের উইকেট নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। তবে ক্রিকেটকে ঘিরে একটা উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। যদিও এখনও এই উন্মাদনা মূলত প্রবাসী ভারতীয়, প্রবাসী পাকিস্তানীদের মধ্যেই বেশি। তবু একটু একটু করে যদি মার্কিন জনতাকেও ছুঁতে পারে, মন্দ কী?‌
‌কিন্তু একটা সংশয়ও আছে। আমেরিকানরা যদি সত্যিই ক্রিকেট খেলতে শুরু করে, যদি বিভিন্ন দেশের তারকাদের এনে দল বানায়, ভারতের সংকট তৈরি হবে না তো!‌ সারা বিশ্বে যেমন আমেরিকার দাদাগিরি, তেমনই ক্রিকেটে এই দাদাগিরিটা ভারতের। মূলত, টাকার জোরেই এই দাদাগিরি। কিন্তু আমেরিকা যদি দাদাগিরি দেখাতে শুরু করে, ‘‌বিকশিত ভারত’‌ আবার ‘‌বঞ্চিত ভারত’‌ হয়ে যাবে না তো!‌  

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.