সৃজন শীল
বইমেলা মানেই বইয়ের সমুদ্র। একেক স্টলে হাজার হাজার বই। ক্রেতারা এসে লাইন দিয়ে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। পরের দিন আবার হাজির হয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন বই। সবমিলিয়ে বইয়ের সংখ্যা কত? কোটি ছাপিয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
প্রশ্ন উঠতেই পারে, মানুষ যে এত বই নিয়ে যাচ্ছেন, আদৌ কি সেগুলো পড়া হয়! নিশ্চিতভাবেই যত বই কেনা হয়, তার অর্ধেকও পড়া হয় না। এটা শুধু এখনকার কথা নয়। পঞ্চাশ বছর আগেও পরিসংখ্যানটাও এমনই ছিল। মানুষ বই পড়ছে না, এই আক্ষেপ বহুকাল আগে থেকেই শুনে আসছি। লক্ষ লক্ষ বই বিক্রির পরেও এই অভিযোগ থাকবে। এটা নিয়ে গেল গেল রব তোলার কিছু নেই। হাহুতাশ করারও কিছু নেই।
বরং, আশার আলো ছড়িয়ে আছে দিতে দিকে। গত কয়েক বছরে পড়ার ছবিটাই যেন বদলে গেছে। প্রযুক্তি নানা দরজা খুলে দিয়েছে। প্রথমত, এখন বাঙালির বই কেনা আর শুধু বইমেলা নির্ভর নয়, এমনকী কলেজ স্ট্রিট নির্ভরও নয়। অনলাইনে সারা বছরই বই পাওয়া যায়। ঘরে বসেই অর্ডার দেওয়া যায়। ঘরে বসেই পাওয়াও যায়। সারাবছরই এই কেনাকাটা চলছে।
পিডিএফ বইয়ের রমরমা অনেকটাই বেড়েছে। বিভিন্ন অ্যাপে, সাইটে, হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে যাচ্ছে সেই পিডিএফ বই। যে যার সময়মতো ডাউনলোড করছেন। পড়ছেন। ভাল লাগলে শেয়ারও করছেন। বইয়ের ব্যবসা এতে কতখানি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, বলা মুশকিল। তবে বইয়ের বিস্তার যে অনেক বেড়েছে, এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
এবার অডিও বুক। অন্তত এক্ষেত্রে লকডাউন এক বিশাল আশীর্বাদ। এই কয়েক বছরে কত লক্ষ লক্ষ অডিও বুক তৈরি হয়েছে, তার কোনও হিসেব নেই। ইউটিউবে গল্প, উপন্যাস পাঠ। লক্ষ লক্ষ ভিউয়ার। যাঁরা হয়ত হাতে বই নিয়ে পড়তেন না, তাঁরা বাসে বা ট্রেনে যেতে যেতেও দিব্যি শুনে নিচ্ছেন পছন্দের গল্প, উপন্যাস। তাঁরা হয়তো প্রত্যক্ষ পাঠক নন। কিন্তু পরোক্ষ পাঠক তো বলাই যায়। এই ইউডিউব আর অডিও বুকের হাত ধরে যদি বাংলা সাহিত্যে কানের মধ্যে দিয়ে মনে ঢুকে পড়ে, মন্দ কী?
তাই, আজকের দিনে বই আর শুধু বইয়ে সীমাবদ্ধ নেই। সে তার নিজের মতো করে ছড়িয়ে পড়েছে। পড়া আর শোনা মিশে গিয়ে তৈরি হয়েছে বিরাট এক ক্যানভাস। এই ক্যানভাস আরও প্রসারিত হোক। পড়া আর শোনার এই মেলবন্ধন বাংলা সাহিত্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাক।