সৃজন শীল
সেই ছোটবেলায় পড়া গ্রীষ্মকালের রচনা। ‘বৈশাখ, জৈষ্ঠ এই দুই মাস হইল গ্রীষ্মকাল।’ সেই ছোটবেলাও নেই, গরমকালের সেই চিরাচরিত সংজ্ঞাও নেই। এখন গ্রীষ্মকাল আর শুধু দু’মাসে সীমাবদ্ধ নেই। বলা যায়, বছরে এগারো মাস গ্রীষ্মকাল। বড়জোর দিন পনেরো বর্ষাকাল, আর দিন পনেরো শীত কাল। ঋতুচক্র থেকে প্রায় হারিয়ে গেছে শরৎ, হেমন্ত, বসন্ত— এই ঋতুগুলোও। শরৎ আর হেমন্ত যেমন গ্রীষ্মেরই এক্সটেনশন পার্ট। আর বসন্ত হল গ্রীষ্মের ট্রেলার।
আর এই গরমেই কিনা দেশজুড়ে নির্বাচন! তাও আবার তিন মাস ধরে! লোসকভা হোক বা বিধানসভা। পঞ্চায়েত হোক বা পুরসভা। এই গরমের সময়েই যেন নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়ে। এমনিতেই পরিবেশ উত্তপ্ত। তার ওপর চলে রাজনৈতিক এই চাপান–উতোর। হিংসা, মারামারি— এগুলো তো আছেই। একদিকে নেতারা দু’মাস ধরে এই গরমে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে যান। শুধু তাঁরা ঘুরে বেড়ালে সমস্যা ছিল না। তাঁরা সভা করবেন। সেই সভায় ভিড় জমাতে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে আমজনতাকে। কে মিটিংয়ে যাচ্ছেন, কে যাচ্ছেন না, সবই হিসেব লেখা থাকছে। কে অন্য দলের সভায় গেলেন, সেটাও নজরে থাকছে। ভোটের পর হবে এর হিসেব নিকেশ। ফলে, ইচ্ছে থাক বা না থাক, এই ধুপসি গরমে মাঠ ভরাতে হবে। মিছিল করতে হবে। নেতারা ভোটে লড়বেন, কিতু আমজনতার আর নিষ্কৃতি নেই।
ভোটের দিনও কম ঝক্কি নেই। সকাল থেকে লাইনে দাঁড়ান। লাইন আর এগোয় না। অবশেষে চড়া রোদ মাথায় নিয়ে দাঁড়ানোর তিন–চার ঘণ্টা পর যদিবা সুযোগ এল, গিয়ে শুনলেন আপনার ভোট নাকি পড়ে গেছে। কোন ‘সমাজসেবক’ এসে আপনার এতবড় ‘উপকার’টি করে গেল, কে জানে! অথবা, লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন বা ভোট দিতে যাচ্ছেন, এমন সময় বোমার আওয়াজ। আর ভোট দেওয়াই হল না।
আচ্ছা, এর থেকে কি পরিত্রাণ নেই? অন্তত ভোটের সময়টা কি বদলানো যায় না! গোটা দেশ তো আর কাশ্মীর বা হরিদ্বার বা দার্জিলিং নয়। দেশের নব্বই শতাংশ জায়গাই এই উষ্ণায়নের চোখরাঙানিতে সন্ত্রস্ত। সেখানে তিন মাস ধরে ভোট পর্ব মানে, সেও এক সন্ত্রাস। শোনা যাচ্ছে, এবার নাকি সরকার এক দেশ, এক ভোটের দিকে এগোতে চাইছে। অর্থাৎ, বিধানসভা, লোকসভা একসঙ্গে। পক্ষে–বিপক্ষে নানা যুক্তি আছে। কিন্তু সবার আগে ভোটকে এই গরম থেকে মুক্তি দিন। অর্থাৎ, এই ভোট প্রক্রিয়া শীতকালে করা যায় কিনা, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করুন। তার পরেও কি সমস্যা থাকবে না? থাকবে। তবে, অর্ধেক সমস্যা কমে যাবে। এটাই বা কম কী? তাই সব রাজনৈতিক দলের কাছেই অনুরোধ, দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে এই বিষয়টি নিয়ে ভাবুন।