মুকুল বসু
এখনও একমাসও পেরোয়নি। হঠাৎই বোর্ডের চুক্তি থেকে বাদ পড়ে গেলেন ঈশান কিষাণ ও শ্রেয়স আয়ার। কারণ, তাঁরা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিলেন। তার থেকেও বড় কারণ, তাঁরা রনজি ট্রফিতে খেলেননি।
আসলে, আইপিএল আসার পর থেকে ঘরোয়া ক্রিকেটকে উপেক্ষা করাটা যেন একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে খেললে স্টেটাস থাকে না। দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক মনে হয়। আর আইপিএলের সুবাদে এক–দু বছরেই কেউ কেউ এতটাই বিত্তবান হয়ে পড়ছেন যে, ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন। ঘরোয়া ক্রিকেট তো বটেই, এমনকী দেশের হয়ে খেলারও সময় নেই। অথচ, আইপিএলের শিবিরে ঠিক সময়মতো পৌঁছে যাচ্ছেন। ক্রিকেটাররা ভুলেই যাচ্ছেন, আইপিএলের সুবাদে আজ হয়তো তাঁরা তারকা, কিন্তু তাঁদের উত্থান সেই ঘরোয়া ক্রিকেট থেকেই। কেউ অনূর্ধ্ব ১৯ পর্যায়ে বা ভারত ‘এ’ দলের হয়ে সাফল্য পেয়েছেন বলেই আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো নিলামে ওই দর হেঁকেছে। নইলে, কে চিনত এই তারকাদের!
সেদিক থেকে বোর্ডকে কড়া পদক্ষেপ নিতেই হত। বাংলায় একটা কথা চালু আছে। ঝিকে মেরে বউকে শিক্ষা দেওয়া। ঈশান বা শ্রেয়সকে শাস্তি দেওয়া হলেও তাঁরা নিছকই উপলক্ষ। আসলে, আরও বড় তারকাদের হয়তো একটা বার্তা দেওয়া হল। সত্যিই তো, বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা বা হার্দিক পান্ডিয়ারা কবে শেষ রনজি ম্যাচে খেলেছেন, নিজেরাও বোধ হয় ভুলে গেছেন। অথচ, একসময় গাভাসকার, কপিলদেব, বেঙ্গসরকার, রবি শাস্ত্রীদের মতো তারকারা নিয়মিত রনজি ট্রফিতে খেলেছেন।
বোর্ড কড়া বার্তা দিতে চাইল, এটা হল মুদ্রার একটা দিক। অন্য একটা দিকও আছে। যেমন, কয়েকদিন আগেই ওয়াংখেড়েতে হয়ে গেল রনজি ট্রফির ফাইনাল। বিদর্ভকে হারিয়ে ৪২ বার রনজি জিতল মুম্বই। কিন্তু এই ফাইনালকে ঘিরে কোনও উন্মাদনাই নেই। গ্যালারি একেবারেই শুনশান। আইপিএলের উদ্বোধন বা ফাইনালের দিন বোর্ড কর্তাদের ঢল নেমে যায়। পরিবার নিয়ে সবাই হাজির হয়ে যান। বিভিন্ন রাজ্য সংস্থার কর্তারাও গিয়ে ভিড় করেন। সেই উপলক্ষে বোর্ডের মিটিং বসে যায়। নির্বাচকরাও দিব্যি হাজির হয়ে যান। অথচ, এই রনজি ফাইনালে মাঝে একদিন হাতে গোনা কয়েকজন প্রাক্তন ক্রিকেটারকে দেখা গেল। না শুরুর দিন, না শেষের দিন, বোর্ডের কোনও শীর্ষ কর্তাকেই দেখা গেল না। বোর্ড সভাপতি রজার বিনি বা বোর্ড সচিব জয় শাহর কোনও পাত্তা নেই। এমনকী, কজন নির্বাচক ছিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন।
প্রশ্ন উঠতেই পারে, যে বোর্ডকর্তারা ঘরোয়া ক্রিকেটের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চান বলে দাবি করছেন, তাঁরা নিজেরা ঘরোয়া ক্রিকেটকে কতখানি গুরুত্ব দিচ্ছেন? রনজি ফাইনালের মতো আসরে তাঁরা নিজেরা গরহাজির কেন? ক্রিকেটারদের না হয় শাস্তি হল। কিন্তু এই বোর্ড কর্তাদের শাস্তি কে দেবে?