বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন
বামেদের ব্রিগেড নিয়ে মূলস্রোড মিডিয়ার উপেক্ষাটা অনেক দিনের। তৃণমূলের ব্রিগেড বা বিজেপির ব্রিগেড যতখানি গুরুত্ব পায়, বামেদের ব্রিগেড সেই তুলনায় কিছুই গুরুত্ব পায় না। গত কয়েক বছর ধরে এই ছবিটাই দেখে আসছি।
কিন্তু এবার অনেকটাই যেন ব্যতিক্রম। মূলস্রোত মিডিয়া অনেকটাই যেন সদয়। দু’তিন দিন আগে থেকেই এই ব্রিগেডের প্রস্তুতি নিয়ে নানা রকম প্রতিবেদন দেখা গেছে। রবিবার সকাল থেকেই টিভি ছিল অনেকটাই ব্রিগেড কেন্দ্রিক। শুধু সভার সরাসরি সম্প্রচার নয়। সকাল থেকেই বিভিন্ন মিছিল। কোনওটা আসছে হাওড়া থেকে, কোনওটা আবার শিয়ালদা থেকে। কোনওটা টালিগঞ্জের দিক থেকে। কোনওটা পার্ক সার্কাসের দিক থেকে। বিভিন্ন চ্যানেল এইসব বিভিন্ন পয়েন্টে লোক নিয়োগ করেছিল। সকাল থেকে নানা দৃষ্টিকোণ থেকেই এই কভারেজ দেখা গেছে।
ইচ্ছে থাকলেও আমি ব্রিগেড যেতে পারিনি। ভেবেছিলাম, টিভিতে কিছুই দেখাবে না। ফেসবুকের বিভিন্ন পেজেই মূলত চোখ রাখব ভেবেছিলাম। কিন্তু সকাল থেকেই দেখলাম, সব চ্যানেলেই কম–বেশি ব্রিগেড কভারেজ। বাম নেতাদের বক্তব্যও দেখানো হচ্ছে। গ্রাম থেকে আসা মানুষের বক্তব্যও তুলে ধরা হচ্ছে। এবং তেমন নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ নেই।
দেখে সত্যিই ভাল লাগল। প্রায় সব চ্যানেলেই পুরো সমাবেশ দেখানো হল। দীর্ঘদিন বাদে রাজ্যের তথাকথিত যুবরাজের সভা। এতদিন কেন গুটিয়ে ছিলেন, কী বার্তা দিতে চান, দলীয় কর্মী–সমর্থকদের উন্মাদনা কতখানি, এদিকে ফোকাস হতেই পারত। কিন্তু চ্যানেলগুলির মূল ফোকাস ছিল বামেদের সভার দিকেই। মীনাক্ষী মুখার্জি বা মহম্মদ সেলিম তো বটেই, সবার বক্তব্যই সরাসরি সম্প্রচার হল।
মিডিয়ার কাছে এমন আচরণই তো প্রত্যাশিত। সবার সামনে কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে। তাতে কিছু বিষয়কে বাড়তি প্রাধান্য দিতেই হয়। শাসক যতটা গুরুত্ব পাবে, বিরোধীদের সমাবেশ ততখানি গুরুত্ব না পেতেই পারে। তাই বলে বিরোধীরা যেন একেবারেই উপেক্ষার পাত্র না হয়ে দাঁড়ায়, সেদিকেও সচেতন থাকাটা জরুরি। লোকসভা ও বিধানসভায় শূন্য পাওয়া বামেদের ব্রিগেডকে ঘিরে এমন কভারেজ কেন? আসলে, তারুণ্যের ডাকে এই ব্রিগেড অনেকেরই মন ছুঁয়ে গেছে। এমনকী যাঁরা বাম বিরোধী, তাঁদের মনেও কোথাও একটা ছাপ ফেলে গেছে। সেই কারণে, মিডিয়া নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখেনি।
এটা বামেদের কাছেও বড় একটা শিক্ষা। ঠিকঠাক দাবি নিয়ে জমায়েত হলে, তরুণ ব্রিগেডকে সামনে এগিয়ে দিলে, মানুষের মনে ইতিবাচক ছাপ ফেলা যায়। মিডিয়াকে গালমন্দ অনেক হয়েছে। অন্তত এই ব্রিগেডের পর একটা ধন্যবাদও কিন্তু মূলস্রোত মিডিয়ার প্রাপ্য।