অজয় নন্দী
খুব ছোটবেলা থেকে খেলাকে ভালবাসতেন? নাহ, এমনটা বলা যাবে না।
নিয়মিত মাঠে যেতেন? সবকিছু খোঁজখবর রাখতেন? তেমনটাও বলা যাবে না।
দারুণ লেখার হাত? একেবারে চমকে দেওয়ার মতো? অতিবড় গুণমুদ্ধরাও এমন দাবি করবেন বলে মনে হয় না।
একজন ভাল ক্রীড়া সাংবাদিক হতে গেলে ওপরের তিনটে গুণ নাকি থাকতে হয়। কিন্তু অরুণ সেনগুপ্তর এর কোনওটাই ছিল না। তবু তিনি একটা স্বতন্ত্র ঘরানা।
তাঁর অন্তত সাংবাদিক হওয়ার কথাই ছিল না। একেবারে পাকেচক্রে হয়ে পড়েছেন। সেই আঙিনাতেই কেটে গেল প্রায় চারটি দশক।
বাড়ি কোন্নগরে। সেখান থেকে ট্রেনে চড়ে আসতেন হাওড়া। ছোটদের একটি পত্রিকায় প্রুফ রিডিং। এদিকে, তখন আজকাল প্রকাশন থেকে বেরোবে সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘খেলা’। ভাল একজন প্রফ রিডারের খোঁজ চলছে। প্রস্তাব গেল কোন্নগরের সেই তরুণের কাছে।
তাঁর প্রথম প্রশ্নই ছিল, আমি কি পারব?
এমন প্রশ্নের কারণ? আসলে, খেলা নিয়ে বিশেষ আগ্রহ নেই। খেলোয়াড়দের কীসব নাম, কী সব বানান, এসব মনে রাখা বেশ শক্ত। সেই কারণেই হয়ত সংশয়টা তৈরি হয়েছিল।
প্রুফ রিডিং দিয়ে শুরু। কিন্তু তখন আজকাল যেন চাঁদের হাট। অশোক দাশগুপ্তর নেতৃত্বে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ধীমান দত্ত, সরোজ চক্রবর্তী, দেবাশিস দত্ত, নির্মলকুমার সাহা, পল্লব বসুমল্লিক, রতন ভট্টাচার্যরা। বাংলা ক্রীড়া সাংবাদিকতায় যেন নতুন এক ঢেউ এসেছে। আবার জমাটি আড্ডাও চলছে। রাত গড়িয়ে যাচ্ছে ভোরের দিকে। কোনও কোনও রাতে হয়ত বাড়িতেই ফেরা হচ্ছে না। পান–গান মিলিয়ে মিশিয়ে যেন এক বৃহত্তর পরিবার।
সেই আড্ডায়, সেই আসরে মিশে গেলেন কোন্নগরের তরুণও। সাংবাদিকদের আড্ডা বলে কথা। বিভিন্ন খেলোয়াড়দের নিয়ে, তাঁদের অজানা দিক নিয়ে জমাট গল্পের আসর। এই চরিত্রগুলোকে ঘিরে তরুণের মনে তখন একটু একটু করে আলোড়ন উঠছে। ওদিকে, নানা কারণে আজকাল ও খেলা তখন বড় একটা টার্গেট। খেলোয়াড়দের পাশে থাকা কাগজ। ফলে, কর্তারা বিশেষ সুনজরে দেখেন না। সাপোর্টারদের খেপিয়ে দেন। সাপোর্টাররাও বুঝে হোক, না বুঝে হোক, বাক্যালঙ্কার অব্যয় প্রয়োগ করেই চলেন। আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হল। রিপোর্টাররাও তখন ময়দানের চেনা মুখ। ফলে, দরকার পড়ল একেবারে আনকোরা কারও। যে রোজ মাঠে যাবে। সাপোর্টারদের ভিড়ে মিশে থাকবে। অথচ, যাকে কেউ চিনবে না।
ভার পড়ল অরুণ সেনগুপ্তর ওপর। সকাল হলেই প্র্যাকটিসে চলে যাওয়া। ভিড়ে মিশে যাওয়া। ফিরে এসে যা যা দেখলেন, সেগুলো বলা। সেগুলো শুনে কেউ একজন লিখে ফেললেন। আস্তে আস্তে নিজেও লিখতে শুরু করলেন। কর্তারাও অবাক। আজকালের লোক মাঠে আসছে না, অথচ, সব খবর পেয়ে যাচ্ছে কীভাবে?
এভাবেই একটু একটু করে শুরু। সেই আনকোরা লোকটাই একটু একটু করে পরিচিত হতে লাগলেন। ফুটবলারদের বন্ধু হয়ে উঠলেন। এই বন্ধু হয়ে ওঠার বড় একটা শর্ত হল বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠা। ফুটবলাররা জানতেন, এই মানুষটিকে বললে কেউ জানবে না। এমনকী কাগজেও বেরোবে না। ছদ্মবেশী সেই আনকোরা লোকটাই হয়ে উঠলেন পুরোদস্তুর রিপোর্টার।