বিপুল রায়
টানা দশ ম্যাচে ছুটছে অশ্বমেধের ঘোড়া। বাকি শুধু আর একটা জয়। তাহলেই আমরা বিশ্বজয়ী।
আমরা তিরাশি দেখিনি। ২০১১ দেখেছি ঠিকই, কিন্তু তখন কতই বা বয়স। এই বারো বছরে বয়সটা যেমন বেড়েছে, বুদ্ধিও বেড়েছে। বুঝতে শিখেছি, বিশ্বকাপ কী জিনিস।
২০১৫ তে আসেনি। ২০১৯ এ দারুণ দাপট নিয়ে সেমিফাইনালে উঠলেও সেখানেই থমকে যেতে হয়েছে। এবারও কি বিশ্বকাপ অধরা মাধুরী হয়েই থেকে যাবে!
সত্যিই এবার সুবর্ণ সুযোগ ছিল। যেমন ব্যাটিং লাইন আপ, তেমনই দুরন্ত বোলিং। কাকে ছেড়ে কার দিকে তাকাবেন। কোনও ম্যাচে রোহিত ঝড় তুলছেন। কোনও ম্যাচে শুভমান গিল। কোহলিও এক–দু রান করতে করতে কখন পৌঁছে যাচ্ছেন শতরানের কাছে। শ্রেয়স আয়ার বা লোকেশ রাহুলও ফাঁকতালে সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন। পরের দিকে রবীন্দ্র জাদেজাও ঝড় তুলছেন। দলটা সব দিক থেকেই দারুণ ব্যালান্সড। এই দল বিশ্বকাপ জিতবে না তো কারা জিতবে?
আর বোলিং! প্রথম চারটে ম্যাচে খেলানোই হয়নি মহম্মদ সামিতে। তারপরেও নামের পাশে কিনা ২৩ উইকেট! বুমরা–সিরাজ শুরু থেকেই ঝড় তুলছিলেন। মাঝের ওভারগুলোয় কুলদীপ এসে টুকটাক উইকেট তুলে নিচ্ছেন। এই দলকে ঘিরে স্বপ্ন দেখব না তো কাদের ঘিরে দেখব!
তিরাশির কথা অনেক শুনেছি। সেই ম্যাচে ভারত নাকি ১৮৩ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল। তাই এবার ২৪০ এও মনে হয়েছিল, রানটা নেহাত কম নয়। সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ছিলেন গ্রিনিজ, রিচার্ডস, লয়েডরা। ধারে–ভারে লাবুশেন, ওয়ার্নার বা ট্রাভিস হেড নিশ্চয় তাঁদের একশো মাইলের মধ্যেও নেই। ভারতের বোলিং ভাবুন। কপিল ছাড়া বলার মতো কেই বা ছিলেন। ওই মদনলাল! ওই বিনি! ওই অমরনাথ! তাঁদের থেকে তো সামি, বুমরা, সিরাজের আক্রমণ বেশ ভাল। এমনকী স্পিনার হিসেবে কুলদীপ বা জাদেজাও কম নন। ২৪০ এর পুঁজি নিয়ে জেতা যাবে না!
তাছাড়া, সেবার খেলা ছিল বিদেশ বিভুঁইয়ে। ভারত তখন পাতে দেওয়ার মতো দলও ছিল না। কেউ পাত্তাও দেয়নি। দেওয়ার কথাও নয়। কিন্তু এই ভারত তো সুপার পাওয়ার। ভারতের সম্মতি ছাড়া আইসিসি–র কোনও গাছের কোনও পাতাও নড়ে না। তার ওপর খেলা হচ্ছে একলাখের বেশি দর্শকের সামনে। সবদিক থেকেই তো আমরা এগিয়ে। তবু হবে না! পঞ্চাশের আগেই ফিরে গেলেন তিন অস্ট্রেলীয়। আর কে ঠেকায়! ওই তো, সামির বলে আগুন ঝরছে। একটা জুটি ভেঙে দিলেই আর দাঁড়াতে পারবে না। বাকি কাজটুকু কুলদীপ বা জাদেজা হাসতে খেলতে করে ফেলবেন।
সব আশায় যেন জল ঢেলে দিল সবরমতী। টানা দশ ম্যাচ জিতলেও আসল সময়ের চাপ নিতে আমরা ব্যর্থ, সেটা আবার প্রমাণিত। যেদিন বিপর্যয় আসে, সেদিন টেনে তোলার কেউ থাকেন না। সেদিন কোনও ম্যাজিকই বোধ হয় কাজ করে না। সেদিন দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।