রক্তিম মিত্র
কয়েক মাস ধরেই শুনে আসছি হুঙ্কারটা। ডিসেম্বর এলেই আসল ধামাকা। ছোট থেকে মাঝারি নানা মাপের বিজেপি নেতারা এই জাতীয় হুঙ্কার দিয়ে আসছেন। ডায়মন্ড হারবারের সভা থেকে ফের এমন হুঙ্কার দেওয়া হল। বলা হল, একটা সুখবর থাকবে। তারপর নাকি এক ট্রাক লাড্ডু এনে বিলি করা হবে।
বিজেপি কী ইঙ্গিত করতে চাইছে, তার কিছুটা অনুমান হয়ত করা যাচ্ছে। বিশেষ করে ডায়মন্ড হারবারে মিষ্টি বিলি করার কথা বলে সেই ইঙ্গিতটা আরও কিছুটা স্পষ্ট করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। কী কী হতে পারে? এখনই বলে দেওয়া যায়, পর্বতের মুষিক প্রসব হবে।
বিশেষ কোনও একজনকে হয়ত জেরার জন্য ডেকে পাঠানো হবে। তিনিও হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে সেই হাজিরা এড়ানোর চেষ্টা করবেন। বা গেলেও সেই চেনা প্রশ্নপত্রই থাকবে। বেরিয়ে এসে যথারীতি হুঙ্কার ছাড়বেন, সিবিআই আমার কিছুই করতে পারবে না।
আসলে, তিনি জানেন, সিবিআই সত্যিই তাঁর কিছুই করতে পারবে না। পারলে অনেক আগেই পারত। সত্যিই যদি সিবিআই সক্রিয় হত, তাহলে দিনের পর দিন এই জাতীয় কর্মকাণ্ড চলতে পারত না। সেই বছর তিন আগে এয়ারপোর্টে কী যেন একটা ঘটেছিল। তারপর কাস্টমস সেই যে শীতঘুম দিয়েছে, এখনও সেই শীতঘুম কাটেনি। তিনি প্রেস কনফারেন্স করে হুঙ্কার ছাড়লেন, কিন্তু তারপরেও এয়ারপোর্টের কোনও সিসিটিভি ফুটেজ সামনে আনার হিম্মৎ দেখাল না কেন্দ্রীয় সরকার। সহজ কথা, প্রমাণ জোগাড় করা তো দূরের কথা, প্রমাণ লোপাট করার দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই সহজ সত্যিটা এখনও যদি বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব না বুঝে থাকেন, তাহলে তাঁদের রাজনৈতিক বোধ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
গত তিন–চার বছর ধরে কাগজে ভেসে ওঠে, কয়লা তদন্তে অমুককে ডাকা হবে। তমুককে ডাকা হবে। মাঝখান থেকে কী হল? সেইসব মাতব্বরদের কেউ কেউ দেশ ছেড়েই পালিয়ে গেল। যারা থেকে গেল, তারাও প্রমাণ লোপাটের পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ পেয়ে গেল। ডাকা হতে পারে, জেরা হতে পারে, এটা জানার পর কোন আহাম্মক নিজের ঘরে নথি জমা রাখবে? সহজ একটা অঙ্ক। কিন্তু তার উত্তর মেলাতে সিবিআই এত ঘুরপথে হাঁটছে, উত্তর না মেলার সম্ভাবনাই বেশি। ফাইভের ঐকিক নিয়মের অঙ্ক যদি কেউ ক্যালকুলাস দিয়ে করতে যান, যা হওয়ার তাই হচ্ছে। সচেতনভাবে সহজ বিষয়কে জটিল করা হচ্ছে। ধরা যাক, ডাকা হল। ধরা যাক, হেফাজতেও নেওয়া হল। নিশ্চিত থাকুন, তিনি জামাই আদরেই থাকবেন। অন্যদের ক্ষেত্রে জেরার যেটুকু তথ্য বাইরে এসেছে, এক্ষেত্রে সেটাও আসবে না। কমাস পরেই জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসে আবার ভাষণ দেবেন।
বঙ্গ বিজেপি আসলে মোদি–অমিত শাহদের কাছে ছাগলের তৃতীয় সন্তানও নয়। এঁরা যতই হুঙ্কার দিয়ে চলুন, যিনি জানার, তিনি জানেন, কিছুই হবে না। কোনও একটা সর্বোচ্চ জায়গা থেকে আশ্বাস না পেলে এমন আস্ফালন দেখানো যায় না। তাই তিনি অনায়াসে বলতে পারেন, সিবিআই আমার কাঁচকলা করবে। হ্যাঁ, অপদার্থ সিবিআই–এর এটাই প্রাপ্য।
সেই সিবিআই–এর ভরসায় ধামাকা দেখাবেন! মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন।