মন জুড়ে তখন শুধুই রঞ্জিত মল্লিক

বেঙ্গল টাইমসের জনপ্রিয় বিভাগ আশির দশক। উঠে এল তখনকার একটি হিট ছবির কথা। সেই ছবিকে ঘিরে অনেক নস্টালজিয়ার কথা। শিশুমনে কত প্রশ্ন ও মুগ্ধতার কথা। লিখেছেন সুমিত চক্রবর্তী।।

কোন ছবির কে পরিচালক, কে চিত্রনাট্যকার, এসব বোঝার মতো বয়স তখন হয়নি। সদ্য বেড়ে ওঠা। শৈশব ছাড়িয়ে কৈশোরেও তখনও আসিনি। তখন যে নায়ক, তারই সিনেমা। আড়াল থেকে কে গাইছে, জানার দরকার নেই। সিনেমায় যাকে দেখাচ্ছে, এটা তারই গান। কী সুন্দর ছিল সেই দিনগুলো। কোন সিনেমার কী বার্তা, কোন দৃশ্য কতটা রোমান্টিক, এসব বুঝতে বয়েই গেছে। যে সিনেমায় যত মারপিট, সেই সিনেমা তত ভাল।

আশির দশক। মফসসলে তখনও হিন্দি সেভাবে জাঁকিয়ে বসেনি। এমনকী ভিডিও হল সংস্কৃতিও সেভাবে গড়ে ওঠেনি। সিনেমা বলতে শহরের সিনেমা হল। আর স্কুলে তিন চারদিনের পর্দা টাঙিয়ে ছবি দেখানো। সে অর্থে বলতে গেলে, আমার মনে প্রথম দাগ কাটা ছবি শত্রু। তখন কে অঞ্জন চৌধুরি, চিনতাম না। আমার কাছে শত্রু মানে রঞ্জিত মল্লিক। এক সৎ ও সাহসী পুলিশ অফিসার। সেই ছবিতে চিরঞ্জিৎ ছিলেন, প্রসেনজিৎও ছিলেন। কিন্তু আমার মনজুড়ে একজনই রঞ্জিত মল্লিক। সেই ছবিটা দেখেই পুলিশকে সম্মান করতে শিখেছিলাম। দৈনন্দিন নানা ঘটনায় পুলিশ সম্পর্কে ধারণা খারাপ হয়। তবু এখনও যে বিশ্বাসটা তলিয়ে যায়নি, তার একটা বড় কারণ শত্রু। মনে হয়, শুভঙ্কর সান্যালের মতো দারগা হয়ত এখনও আছেন। তখন থেকেই রঞ্জিত মল্লিক আমার প্রিয় নায়ক। এই হ্যাংওভারটা তার পরেও আরও বছর পনেরো ছিল। রঞ্জিত মল্লিকের প্রায় সব ছবিই দেখেছি। মনে হত, এই লোকটা খারাপ হতে পারে না। একজন আদর্শবান লোক বললেই এই মুখটা ভেসে উঠত।

মনে রাখার মতো সব সংলাপ। হাততালি দিতাম। তখন মনে হত, এগুলো রঞ্জিত মল্লিকই বলছেন। পরে বুঝলাম, ওই সংলাপগুলো অঞ্জন চৌধুরির লেখা। ওই ছবিতে প্রসেনজিৎ ছিল গুন্ডা টাইপের। তাই পরে প্রসেনজিতের যত ভাল ছবিই দেখি, ওই ছবি একটা অন্যরকম ধারনা গড়ে দিয়েছিল। মনে হত, এই লোকটা খুব খারাপ। ছবিতে চিরঞ্জিৎও ছিলেন সৎ পুলিশের ভূমিকায়। হয়ত তাই তাঁর প্রতিও একটা আলাদা দুর্বলতা রয়ে গেছে।

মহুয়া রায়চৌধুরি। আশির দশকে আমার আরেক প্রিয় চরিত্র। কী মিষ্টি মুখটা!‌ খুব কাছের মনে হত। হঠাৎ শুনলাম, আগুনে পুড়ে তাঁর নাকি মৃত্যু হয়েছে। সেটা কি চলে যাওয়ার বয়স ছিল!‌ আশির দশকে মন ভারাক্রান্ত করার মতোই একটা ঘটনা। ছবির কথায় ফিরি। মন কেমন করে দেওয়া একটা গান ছিল— বল না গো, কার মা তুমি/‌ কোথায় তোমার ছেলে। গানটা পরে অনেকবার শুনেছি। যতবার শুনেছি, চোখ ছলছল করে উঠেছে। ছোট্টু নামে একটা ছেলের লিপে গানটা ছিল। আমি জানতাম, এটা ছোট্টুরই গান। বলতাম, ছেলেটা কী ভাল গান গায়!‌ পরে জানলাম, ওটা নাকি আরতি মুখার্জির গান। ছেলের গলায় মেয়ের গান!‌ এমন কত বিস্ময় যে তৈরি হয়েছে। হ্যাঁ, সেই ছোট্টু। আসল নাম মাস্টার তাপু। আরও দু একটা ছবিতে টুকটাক কাজ করেছে। তারপর ছেলেটা কোথায় যে হারিয়ে গেল!‌ কেউ কি সন্ধান দিতে পারেন!‌

(‌বেঙ্গল টাইমসের জনপ্রিয় বিভাগ— আশির দশক:‌ ফিরে দেখা। আশির দশকের নানা ঘটনা, নানা অনুভূতি ও চরিত্র উঠে আসতে পারে এই ফিচারে। আজ উঠে এল তখনকার একটি জনপ্রিয় সিনেমা ও তাকে ঘিরে তখনকার ভাবনার কথা। এমন নানা বিষয় নিয়ে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা:‌ bengaltimes.in@gmail.com)

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.