Categories খেলা

‌এই ছ্যাঁচড়ামো মোহন–‌সচিবকে মানায়!‌

অজয় নন্দী

কেউ কেউ আছেন, পুরনো অভ্যেস কিছুতেই ছাড়তে পারেন না। ধরা যাক, কোনও কাউন্সিলর। হঠাৎ করে মন্ত্রী হয়ে গেছেন। কিন্তু কাউন্সিলর সত্তাটা আর ভুলতে পারছেন না। এমন এমন কাণ্ড করে বসেন, যা একজন মন্ত্রীর কাছে নিতান্তই বেমানান। কিন্তু কী আর করা যাবে, ভুল লোককে ভুল জায়গায় বসালে যা হওয়ার, তাই হয়।

না, এটা কোনও রাজনীতিক সম্পর্কে লেখা নয়। এই লেখার চরিত্র মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত। কখনও তিনি ছিলেন কনভেনার। কখনও ছিলেন অর্থসচিব। নানাভাবে প্রচারের আলোয় ভেসে থাকার জন্য যা যা করা দরকার, তাই করতেন। কখনও প্রাক্তনদের অপমান করতেন। কখনও গায়ে গা পেড়ে ঝগড়া করতেন। কখনও ফুটবলারকে অকারণে হেনস্থা করতেন। আর সস্তা প্রচারও জুটে যেত।

এখন তিনি মোহনবাগান সচিব। কিন্তু এই চেয়ারের মর্যাদা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেন না। এখনও সেই আগের মতোই ছেলেমানুষি চালিয়ে যাচ্ছেন। এমন এমন বিষয়ে শিরোনামে আসার চেষ্টা করছেন, যেটা ওই চেয়ারে বসা লোককে মানায় না। কিন্তু তাঁকে যে প্রচারে থাকতেই হবে। নিজের যোগ্যতায় সচিব হলে হয়ত এই কাণ্ডজ্ঞান থাকত। কিন্তু কখনও অকৃতজ্ঞের মতো প্রিয়জনদের সঙ্গ ছেড়েছেন। আবার কখনও মুখ্যমন্ত্রীর ভাইকে সঙ্গী করে যেন ভোট না হয়, তা নিশ্চিত করেছেন। অন্যের দয়ায় পদ পেলে সেই পদের মর্ম বোঝা কঠিন।

ধরা যাক, আপনার জ্বর হয়েছে। আপনি ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাবেন?‌ নাকি আগে পাড়াপড়শীকে চিৎকার করে জানাবেন। ইনি পাড়াপড়শীকে সাক্ষী রেখে ডাক্তারকে ফোন করবেন। ডাক্তার কী প্রেসক্রিপশন দিলেন, সেটা দুনিয়াসুদ্ধু লোককে ঢাঁক পিটিয়ে জানাবেন। ওষুধ না খেয়েই চিৎকার করবেন, রোগ সারল না। আবার ঘটা করে ডাক্তারকে ফোন করবেন।

আইএফএ–‌র কাছে মোহনবাগানের কিছু বকেয়া আছে। থাকতেই পারে। সেটা কীভাবে আদায় করবেন, তা নিয়ে সচিবের সঙ্গে কথা বলতেই পারেন। কিন্তু তাঁর সবকিছুই ঢাকঢোল পিটিয়ে। কখনও দুনিয়ার লোককে সামনে রেখে চিঠি লিখছেন। কখনও চিঠি লিখলাম, এই মর্মে প্রেস কনফারেন্স করছেন। আবার কখনও চিঠির উত্তর পেলাম, এই মর্মে আবার প্রেস কনফারেন্স করছেন। কখনও আইএফএ সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে সেই বৈঠকের ছবি হ্যাংলার মতো বাজারে ছাড়ছেন (‌সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ভাইকে না রাখলে তাঁর আবার গোঁসা হবে। তাই ফ্রেমে মুখ্যমন্ত্রীর দন্ত বিগলিত করা ভাই বসে আছেন)‌। কখনও ফাঁকা হুমকি দিয়ে চলেছেন। কলকাতা লিগ খেলব না, এইসব বলে বাজার গরম করছেন।

প্রচারের মোহ কম–‌বেশি অনেকেরই থাকে। কিন্তু তিনি যেটা করে চলেছেন, তাকে স্রেফ ছ্যাঁচড়ামো ছাড়া আর কী বলা যায়, জানি না। যেটা সহজেই দু’‌পক্ষের কথাবার্তায় মিটে যাওয়ার কথা, সেটাকে অহেতুক জটিল করছেন। দুজনের হাতে দুটো মোবাইল। দুজনের কাছেই দুজনের নম্বর আছে। কথা বলবেন, মিটিয়ে নেবেন। এটাই তো হওয়া উচিত। তার বদলে দেড় মাস ধরে এই সস্তা নাটক করে চলেছেন। তাঁর জায়গায় অন্য কেউ থাকলে সাতদিনেই এই সমস্যা মিটিয়ে ফেলতেন। তিনি যতটা হ্যাংলা, ততটাই অপদার্থ। তাই শুধু প্রচারের ক্ষির খাবেন বলে এই সমস্যা জিইয়ে রেখেছেন।

আর এই ছ্যাঁচড়ামোর পালে হাওয়া দেওয়ার জন্য পেটোয়া মিডিয়ারও অভাব নেই। তাঁরা দিনের পর দিন এসব ছেপেই চলেছে। মোহনবাগান সচিবকে যে এমন ছ্যাঁচড়ামো মানায় না, এটুকু মনে করিয়ে দেওয়ার লোক নেই।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.