সরল বিশ্বাস
তাঁর দিল্লি যাওয়ার উপায় নেই। অমনি আওয়াজ উঠতে থাকে, সেটিং সেটিং।
সত্যিই তো। একজন মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি যেতে পারেন না? প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন না? জ্যোতিবাবু দিল্লি যেতেন না? বুদ্ধবাবু দিল্লি যেতেন না? তাঁরা কি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতেন না? তখন তো সেটিং সেটিং আওয়াজ উঠত না।
তৃণমূল নেতৃত্ব ঘুরে ফিরে এরকম যুক্তি সাজানোর চেষ্টা করেন। কথাগুলোয় যুক্তি আছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু এই শেখানো বুলি ছাড়া আর কীই বা বলতে পারেন?
সত্যিই তো, জ্যোতিবাবু বা বুদ্ধবাবুর ক্ষেত্রে এমন প্রশ্ন উঠত না কেন? এমনকী, অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা দিল্লি গেলেও তো এমন প্রশ্ন ওঠে না। মমতা ব্যানার্জি গেলেই এমন প্রশ্ন ওঠে কেন? এটা বরং তৃণমূল নেতৃত্ব ভাবুন।
বিরোধীরা আওয়াজ তুলবেন, ব্যঙ্গ করবেন, টিপ্পিনি কাটবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পরিস্থিতি এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, খোদ তৃণমূলের নেতা কর্মীকেও বিশ্বাস করানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁরাও মনে মনে বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি যাচ্ছেন মানেই সিবিআই, ইডি সব গুটিয়ে যাবে। দু একটা লোকদেখানো ধরপাকড় হবে। আসল জায়গায় ইডি, সিবিআই পৌঁছতেও পারবে না।
রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বকে জিজ্ঞেস করুন। তাঁরাও এখন আর নিজেদের দিল্লির নেতাদের বিশ্বাস করেন না। তাঁরাও জানেন, তাঁদের কথাই কোনও মূল্যই নেই। মুখ্যমন্ত্রী একবার দিল্লি গেলেই সব ‘ঠিকঠাক’ হয়ে যাবে। সিবিআই, ইডি–র সব গর্জন থেমে যাবে।
প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে কি মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক হয়নি? চিরকাল হয়ে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের দাবিদাওয়া নিয়ে যাবেন। স্মারকলিপি দেবেন। সঙ্গে অফিসাররা থাকবেন। সেটাই দস্তুর। কিন্তু এই দুজনের বৈঠক হয় অদ্ভুত এক আবহে। কোনও তরফেই কোনও অফিসার থাকেন না। থাকেন শুধু দু’জন। এই কারণেই গুঞ্জনটা এত ছড়িয়ে পড়ে। রাজ্যের দাবিদাওয়া নিয়েই যদি বৈঠক হয়, তাহলে অফিসারদের সঙ্গে নিতে বাধা কোথায়? দু–একজন মন্ত্রীকে সঙ্গে রাখতে বাধা কোথায়?
এতক্ষণের রুদ্ধদ্বার আলোচনা। রাজ্যের দাবিদাওয়া নিয়ে দু–একটা কথা তো হতেই পারে। কিন্তু কেউই কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন, সিবিআই–ইডি নিয়ে কোনও কথা হয়নি? এটুকু বলার সৎসাহস টুকুও কেউ দেখাতে পারেন না। এর থেকেই যা বোঝার, বুঝে নিন।