সোহম সেন
আচ্ছা, কপিলদেবের সেই ১৭৫ রানের ইনিংসটা দেখেছেন?
প্রশ্নটি একবার হাওয়ায় ভাসিয়ে দিন। তারপর দেখুন কীসব উত্তর আসে।
কেউ বলবেন, ‘উফ, কী ব্যাটিংটাই না করেছিল। ওই ইনিংস কখনও ভোলা যায়! ১৭ রানে পাঁচ উইকেট পড়ে গিয়েছিল। আমরা তো আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। সেখান থেকে কপিলদেব কী ব্যাটিংটাই না করল।’
কেউ হয়ত বলবেন, ‘আমাদের বাড়িতে তখনও টিভি আসেনি। পাশের বাড়ির অমুক কাকুর বাড়িতে দেখেছিলাম। এখনও চোখের সামনে ভাসছে।’
কেউ বলবেন, ‘ওই ইনিংসটা একটা রূপকথা। কপিল বাপ কা বেটা। এরকম ইনিংস দেখাটা ভাগ্যের ব্যাপার।’
কেউ আবার বলবেন, ‘তখন তো গ্রামে টিভি আসেনি। পরে অনেকবার হাইলাইটস দেখেছি। উফ, কী মার, কী মার। চিরদিন মনে থাকবে।’
মোটামুটি এই জাতীয় উত্তরই ভেসে আসবে। অর্থাৎ, সবাই দেখেছেন। সবাই ওই ইনিংসের সাক্ষী। কিন্তু ঘটনা হল, ওই ম্যাচ সরাসরি দেখার কোনও প্রশ্নই ছিল না। কারণ, খেলাটা হয়েছিল লন্ডন থেকে কিছুটা দূরে টার্নব্রিজ ওয়েলস নামক অখ্যাত একটা মাঠে। তার ওপর সেদিন ছিল বিবিসির ধর্মঘট। ফলে, ওই ম্যাচের কোনও ভিডিও রেকর্ডিং হয়নি। বিবিসির আর্কাইভেও নেই। এমনকী, স্বয়ং কপিলদেবের কাছেও নেই।
তাহলে লোকে কেন এরকম স্মৃতিচারণ করেন? আসলে, সবাই সেই ইনিংসের সাক্ষী থাকতে চান। অন্তত সাক্ষী ছিলাম, এটা বোঝাতে চান। তার জন্য বেমালুম মিথ্যে বলেন। তিনি হয়ত জানেনও না, সেই ম্যাচ দেখানো হয়নি।
তবে সবাই কি মিথ্যে বলেন? একটা অন্যরকম মনোবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার কথাও শুনেছিলাম। আসলে, ওই ইনিংসটা একটা মিথ হয়ে আছে। তাই অনেকে মনে করেন, তিনি হয়ত সত্যিই দেখেছেন। কেউ কেউ বিশ্বকাপের ফাইনাল দেখেছেন। সেটাকেই ওই ম্যাচ ভেবে বসেন।
সবমিলিয়ে ১৭৫ একটা মিথ। ১৮ জুন এলে সেই দিনটা ফিরে ফিরে আসে।