বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন: পূর্ত দপ্তরের কাজকর্ম নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নাকি ভীষণ ক্ষুব্ধ। জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়েছেন। টিভিতে ঘটা করে প্রচার হয়েছে। কাগজেও ফলাও করে সেই উষ্মার কথা। সেই প্রসঙ্গেই কতগুলো প্রশ্ন এসে গেল।
একটা সমীক্ষা হয়ে যাক। সাধারণ মানুষকে একটু জিজ্ঞেস করে দেখুন তো, রাজ্যের পূর্তমন্ত্রীর নাম কী? যাঁরা ফেসবুকে রাজনীতি নিয়ে এত চর্চা করেন, তাঁদেরও অধিকাংশই জানেন না। ২০১৬–২১ কে পূর্তমন্ত্রী ছিলেন? সেই উত্তরও পাবেন না। ২০১১–১৬ কারা পূর্তমন্ত্রী ছিলেন? সেই উত্তরও অজানা। এত প্রচারের ঢক্কানিনাদের যুগেও লোকে পূর্তমন্ত্রীর নাম জানে না। কারণ, দপ্তরটাকে একেবারেই অকেজো করে তুলেছেন। গত কুড়ি বছরে রাজ্যের একজন পূর্তমন্ত্রীর নাম বলুন। এই মর্মে খোদ তৃণমূলের লোকেদের কাছে একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হোক। দেখুন, অধিকাংশ তৃণমূল কর্মীও শেষমেষ মাথা চুলকে হয়ত ক্ষিতি গোস্বামীর নাম বলবেন। তবু তৃণমূল জমানার কারও নাম বলতে পারবেন না।
আসলে, রাস্তা থেকে সেতু— যা কিছু হয়, সবই উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। ফলে, পূর্তমন্ত্রী সেই আড়ালেই থেকে যান। এমনকী পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদের রাস্তা। সেখানেও সভাপতি বা সভাধিপতির উদ্বোধন করার সৌভাগ্য হয় না। জেলা সফরে গিয়ে সেখানে গিয়েও থাবা বসিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। পূর্তমন্ত্রী নতুন কোনও রাস্তা বা সেতু পরিদর্শন করতে যাবেন, তার উপায় নেই। যদি মুখ্যমন্ত্রী রেগে যান! ২০১৬–২১ সময়ের কথাই ধরা যাক। সেই সময় যিনি পূর্তমন্ত্রী ছিলেন, তিনি মোটেই প্রচার বিমুখ ছিলেন না। প্রচারের জন্য যতটা হ্যাংলামি করা যায়, যতটা নিতে নামা যায়, কোনও কার্পণ্য রাখেননি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, তাঁকেও পূর্তমন্ত্রী হিসেবে কেউ চিনতেন না। নামটা বলেই ফেলা যাক। অরূপ বিশ্বাস। খেলোয়াড়দের সঙ্গে তাঁর কয়েক হাজার ছবি দেখেছেন। তৃণমূলের মিছিলে ছবি দেখেছেন। ফিল্মস্টারদের পাশে ঘুরঘুর করে ফ্রেমে আসতে দেখেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চে মুখ বাড়াতে দেখেছেন। কিন্তু মনে করে দেখুন তো পূর্তমন্ত্রী হিসেবে তাঁর কটা ছবি কাগজে দেখেছেন? তাঁকে কটা সেতু বা রাস্তার উদ্বোধন করতে দেখেছেন? তিনি কোথাও গেলে ঘোষণা করা হয়েছে আমাদের মাঝে এসেছেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস— এই মর্মে ঘোষণা শুনেছেন?
দপ্তর হিসেবে কোথায় পূর্ত আর কোথায় ক্রীড়া? দুই দপ্তরের বাজেট ও গুরুত্বে আকাশ–পাতাল তফাত। অথচ, পূর্তমন্ত্রীকে কী অবলীলায় ক্রীড়ামন্ত্রী বলে পরিচয় দেওয়া হয়েছে! মন্ত্রীর নিজেরও কখনও মনে হয়নি, ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে তাঁকে চিহ্নিত করা মানে তাঁর গুরুত্বকে খাটো করা। আচ্ছা, মুখ্যমন্ত্রীকে যদি মুখ্যমন্ত্রী না বলে ভূমি সংস্কার মন্ত্রী বা পার্বত্য উন্নয়ন মন্ত্রী বলা হয়, তাহলে কেমন বেআক্কেলে শোনাবে! ঠিক তেমনই, পূর্তমন্ত্রীকে যদি ক্রীড়ামন্ত্রী বলে ডাকা হয়, একইরকম বেআক্কেলে শোনানোর কথা। কিন্তু এই বোধটা যদি মন্ত্রীর থাকত, তাহলে তো আর ভাবনা ছিল না।
এখনকার পূর্তমন্ত্রী। তাঁর নামটাও প্রায় সবাই জানেন। কিন্তু ইচ্ছে করেই নামটা উহ্য থাকল। লোকে একটু খোঁজখবর করুক। জানার চেষ্টা করুক।