মিডিয়া সমাচার
বছর কুড়ি আগের কথা। তখন তিনি কলকাতার মেয়র। নানা অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি মানেই সেই অনুষ্ঠান অন্য এক মাত্রা পায়। সেবারের অনুষ্ঠান ছিল সম্ভবত আশুতোষ বার্থ সেন্টিনারি হলে।
প্রথমে প্রথামাফিক ভাষণ। পরে দর্শকদের বলা হল প্রশ্ন করতে। নানা রকম প্রশ্ন এল। তিনিও নিনজের মতো করে উত্তর দিলেন। হঠাৎ এক দর্শক প্রশ্ন করে বসলেন, কলকাতায় প্রেম করার জায়গার বড্ড অভাব। পুলিশের খুব উৎপাত। শহরের মেয়র হিসেবে এই নিয়ে আপনি কিছু ভেবেছেন?
উদ্যোক্তারা বেশ অস্বস্তিতে। মেয়রকে এমন বেআক্কেলে প্রশ্ন কেউ করতে পারেন, তাঁরা ভাবতেও পারেননি। তাঁরা তখন কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না। পাছে মেয়র রেগে যান।
কিন্তু মেয়র মশাই যথার্থি রসিক মানুষ। তিনি একটুও রাগলেন না। না উদ্যোক্তাদের ওপর, না প্রশ্নকর্তার ওপর। বরং তাঁর মুখে মুচকি হাসি। প্রশ্নকর্তার উদ্দেশে তিনি বললেন, ‘আপনার দুঃখটা আমি বুঝতে পারছি। আপনি এখনও প্রেমিকা জোটাতে পারেননি। যদি প্রেমিকা জোটাতে পারতেন, জায়গাও ঠিক খুঁজে নিতেন।’
গোটা হলে তখন হাসির ফোয়ারা। একটু থেমে মেয়র মশাই বললেন, ‘শুনুন, আমিও প্রেম করে বিয়ে করেছি। কাজেই কোথায় প্রেম করতে হয়, কীভাবে করতে হয়, সে বিষয়ে আমারও কিছু ধারণা আছে। কথায় আছে, গাই–বাছুরে মেল থাকলে পালে গিয়েও দুধ দেয়। তাই যারা প্রেম করে, তারা জায়গা ঠিক খুঁজে নেয়। আমাদের সময় লুকিয়ে চুরিয়ে প্রেম করার কত জায়গা ছিল। আমি নিশ্চিত, এখনও অনেক জায়গা আছে। বরং, আরও জায়গা বেড়েছে। আমি এখন প্রেম করি না। লুকিয়ে চুরিয়ে কারও সঙ্গে দেখা করি না। তাই তেমন আপডেটেড নই। তবু আপনি যখন বললেন, খোঁজ নিয়ে দেখব এখনকার ছেলে–মেয়েরা কোথায় দেখা করে। তারপর আপনাকে জানিয়ে দেব। তবে সবার আগে পরামর্শ দেব, জায়গা নিয়ে হতাশায় ভুগবেন না। আগে জায়গা ঠিক করে তারপর প্রেম করবেন, এমনটা ভাবতে গেলে বহু প্রেমিকা ফস্কে যাবে। তাই আগে প্রেমিকা খুঁজুন। জায়গা ঠিক পেয়ে যাবেন।’
হ্যাঁ, এই ছিলেন সুব্রত মুখার্জি। শুধু তাৎক্ষণিক বুদ্ধি আর রসিকতা দিয়ে কত কঠিন বিষয়কে কত সহজ করে বুঝিয়ে দিতেন।