সংহিতা বারুই
পথের পাঁচালী ছবির পরিচালক কে, সবাই জানেন। কিন্তু এই ছবির প্রযোজক কে? অনেকেরই হয়ত অজানা। সত্যিই তো, প্রযোজককে নিয়ে কে আর মাথা ঘামায়! কোনও সন্দেহ নেই, বাংলা ছবিতে পথের পাঁচালী একটি মাইলস্টোন। আর সেই মাইলস্টোনের সঙ্গে কোথাও একটা জড়িয়ে আছে বিধানচন্দ্র রায়ের নাম। কারণ, তিনি না থাকলে হয়ত এই ছবি দিনের আলোই দেখত না। চূড়ান্ত পর্বে এসে ছবিটির প্রযোজনা করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
অল্প বয়সেই মারা গিয়েছিলেন সুকুমার রায়। সত্যজিতের বয়স তখন মাত্র তিন বছর। বাবার সান্নিধ্য কখনই পাননি। খুব অভাবের মধ্যেই বেড়ে উঠেছেন। পারিবারিক সম্পত্তিও তেমন ছিল না। কলকাতার পড়া শেষ করে গেলেন শান্তিনিকেতন। তারপর যখন ছবি বানাতে নামলেন, হাতে তেমন পয়সা নেই। নিজের গয়না তুলে দিয়েছিলেন স্ত্রী বিজয়া রায়। শোনা যায়, কিশোর কুমার সেই সময় তুলে দিয়েছিলেন পাঁচ হাজার টাকা। কিন্তু এই টাকায় কি আর সিনেমা হয়! ফলে, মাঝপথেই কাজ থমকে গেল।
ঠিক তখনই এগিয়ে এলেন বিধানচন্দ্র রায়। সত্যজিতের মায়ের বন্ধু ছিলেন বিধানচন্দ্র রায়। তিনিই বারবার বিধান রায়কে অনুরোধ করেন ছবিটিকে সাহায্য করতে। কিন্তু সরকারের কাজ তো সিনেমা বানানো নয়। সরকারের তো অডিট হয়। খরচটা কোন খাতে দেখানো হবে? বিধানচন্দ্র জানতে চাইলেন, ছবির নাম কী? শুনলেন পথের পাঁচালী। ব্যাস, উপায় বেরিয়ে গেল। পথ আছে। গ্রাম বাংলা আছে। ব্যাস, আর কী চাই! গ্রাম বাংলার পথের ওপর তথ্যচিত্র বলে চালিয়ে দেওয়াই যায়। টাকা এল পিডব্লুডি–র ফান্ড থেকে।
আইন আছে। আইনের ফাঁকও আছে। প্রচলিত আইনের বাইরে গিয়ে তিনি সাহায্য করলেন বাংলার উঠতি পরিচালককে (তখনও পর্যন্ত যাঁর একটি ছবিও তৈরি হয়নি)। ছবি মুক্তি পেল। শোনা যায়, কলকাতায় বিশেষ স্ক্রিনিং হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নেহরুকে ছবিটা দেখিয়েছিলেন বিধান রায়। তারপর কী হয়েছিল, সে তো এক ইতিহাস।
চিকিৎসক বিধান রায়, প্রশাসক বিধান রায় বহু আলোচিত। কিন্তু চলচ্চিত্রে তাঁর অবদান কতটুকুই আর আলোচিত হয়! সেদিন কঠিন সময়ে তিনি না পাশে থাকলে হয়ত পথের পাঁচালী তৈরিই হত না।