পাঁচ কোটি ম্যানগ্রোভের অবাস্তব ঘোষণা কে করেছিল?‌

শ্যামল জানা

এক বছর আগের কথা। আমফানে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল বাংলার সমুদ্র উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা। মূলত পূর্ব মেদিনীপুর ও দুই চব্বিশ পরগনা। অনেক গাছ ভেঙে গিয়েছিল। অনেক ঘরবাড়িও ভেঙে গিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী যথারীতি হেলিকপ্টারে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করলেন। নিদান দিলেন, পাঁচ কোটি ম্যানগ্রোভ লাগাতে হবে। তাহলে নাকি ঝড় আটকে যাবে।

mangrove

সমুদ্র উপকূল ও সুন্দরবনে দীর্ঘদিন ধরে ম্যানগ্রোভ অরণ্য ধ্বংস করা হচ্ছে। পরিবেশপ্রেমী বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ জানালেও প্রশাসনের তেমন কোনও হেলদোল দেখা যায়নি। কোথায় কত ম্যানগ্রোভ অরণ্য রয়েছে, কত গাছ কাটা হয়েছে, কত গাছ ঝড়ে নষ্ট হয়েছে, এই নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট সমীক্ষা হয়েছে কিনা জানা নেই। সমীক্ষা হোক বা না হোক, মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই মনগড়া কথা বে থাকেন। নিজের ইচ্ছেমতো পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। কী করতে হবে, সে ব্যাপারেও তিনি নিদান দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রেও তিনিই নিদেন দিলেন, পাঁচ কোটি ম্যানগ্রোভ লাগাতে হবে।

স্বপ্নে পোলাও রাঁধলে ঘি অল্প ঢালব কেন?‌ আশ্বাস যদি দিতে হয়, জবরদস্ত আশ্বাস দেওয়াই ভাল। এই পাঁচ কোটি গাছ রাতারাতি আসবে কোথা থেকে?‌ এসব বোঝার দায় তাঁর সেদিনও ছিল না। এখনও নেই। তাই হঠাৎ করে বলে বসলেন, আগের বছর ম্যানগ্রোভ লাগানো হয়নি কেন?‌ সব বনদপ্তরের গাফিলতি। যেন তিনি টাকা বরাদ্দ করেছিলেন, বনদপ্তর ইচ্ছে করেই তা লাগায়নি। আসলে, বনমন্ত্রী ছিলেন রাজীব ব্যানার্জি। যেহেতু ভোটের আগে তিনি বিজেপিতে গিয়েছিলেন, অতএব, তাঁর দপ্তরকে আক্রমণ করতে হবে। ঠেক যেভাবে সেচ দপ্তরকে অকেজো প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। কারণ, এই দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী।

সুতরাং, আত্মসমালোচনার নামে মুখ্যমন্ত্রী যা যা বলছেন, তার পেছনেও রয়েছে গভীর রাজনীতি। বেছে বেছে ছেড়ে যাওয়া দুই মন্ত্রীর দুটো দপ্তরকেই টার্গেট করছেন। এই দুই দপ্তরের ব্যর্থতাকেই বড় করে দেখাতে চাইছেন। এই দুই দপ্তরের অপদার্থতার কোনও দায় তিনি নেবেন না। ‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.