(ঠিক পাঁচ বছর আগে এই খোলা চিঠি লেখা হয়েছিল। নারদ তদন্তের আবহে আবার উত্তাল বাংলার রাজনীতি। সেই পুরনো লেখা আবার ফিরে এল বেঙ্গল টাইমসে।)
বাকিরা হাত পেতে টাকা নিলেন। যা পেলেন, তাই নিলেন। একমাত্র হাকিমবাবু নিলেন না। বললেন, এই টাকা আমরা নিলে ছোট ছেলেরা কী নেবে? বুঝিয়ে দিলেন, মাত্র পাঁচ লাখে তাঁকে কেনা যায় না। তাঁর এই মহানুভবতা ও স্বার্থত্যাগকে বাঙালি বুঝল না। এই আকালে বাঙালির মর্যাদা তিনিই রক্ষা করলেন। তাঁকে খোলা চিঠি লিখলেন স্বরূপ গোস্বামী।।
আপনার জন্য সত্যিই খুব গর্ব হচ্ছে। এই দুঃসময়েও আপনি দেখিয়ে দিলেন, বাঙালির এখনও মেরুদন্ড আছে। আপনি ওই নারদবাবুদের বুঝিয়ে দিলেন, বাঙালি এত সহজে বিকিয়ে যায় না।
আমরা বাঙালিরা বরাবরই কূপমন্ডুক। গুণীর কদর করতে শিখলাম না। গত দুদিন ধরে একটা ভিডিও ফুটেজ নিয়ে আমরা কত লাফালাফি করছি। অথচ, এর আড়ালে কতকিছু রয়ে গেছে, তা ভেবেও দেখছি না। মহামতী গোখলে বলেছিলেন, বাঙালি আজ যা ভাবে, সারা ভারত তা ভাববে আগামীকাল। সে এক সময় ছিল, যখন বাঙালিদের সম্পর্কে এমন ভাবা হত। কিন্তু বাঙালির সেই গরিমা আজ আর নেই। বাঙালি আজ গুণীর কদর করতেও জানে না। বাঙালি সত্যিই দুর্ভাগা এক জাতি।
নারদবাবুদের ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, সবাই হাত পেতে টাকা নিয়ে নিচ্ছেন। কেন নিচ্ছেন, কী করতে হবে, তাঁরা নিজেরাও জানেন না। একজন অচেনা লোক এসে বললেন, টাকা দিতে চাইলেন, ওমনি সবাই হাত পেতে দিলেন। এক প্রবীণ সাংসদ তো বলেই ফেললেন, ‘এত টাকা’! এত পণ্ডিত মানুষ, এম পি দের রেট কত সেটাই জানেন না।
সত্যিই তো, একজন সাংসদ মাত্র পাঁচ লাখ টাকা হাত পেতে নেবেন কেন? ওটা তো কাউন্সিলররা নিয়ে থাকেন, বা কাউন্সিলরের চ্যালাচামুন্ডারা পেয়ে থাকেন। সত্যিই তো, বড় বড় নেতারা যদি হাত পেতে পাঁচ লাখ নিয়ে নেন, তাহলে ছোট ছোট ছেলেরা কী নেবে ?
একমাত্র আপনিই এই সহজ সত্যিটা বুঝেছেন। তাই সাতসকালে স্যান্ডো গেঞ্জি পরে সাফ জানিয়ে দিলেন, এই টাকায় যদি আমরা ভাগ বসাই, তাহলে ছোট ছোট ছেলেরা কী নেবে ? এটা ওদের দিয়ে দিন।
আপনার উদারতা, আপনার আত্মত্যাগের তারিফ করতেই হয়। আপনি বুঝিয়ে দিলেন, ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করতে নেই। আপনি সত্যিই ছোটদের কথা ভাবেন। আপনি সত্যিই ব্যতিক্রমী।
এই বাংলায় শিল্প নেই, রোজগার নেই। তাই তোলাবাজি বা সিন্ডিকেট চললেও অল্প টাকাতেই খুশি থাকতে হচ্ছে। বাজারদরে বেশ মন্দা। হাত পেতে যা পাওয়া যায়, তাই নেওয়া যাক, এটাই মূলমন্ত্র। তার মাঝেও আপনি বুঝিয়ে দিলেন, স্যান্ডো গেঞ্জি পরে থাকব, তবু ওই সামান্য পাঁচ লাখে হাত দেব না।
বাঙালির আভিজাত্যকে বাকিরা যখন ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছেন, তখন আপনি বাঙালির মুখ কিছুটা হলেও উজ্জ্বল করলেন। অথচ, ওই সবজান্তা চ্যানেলগুলো তাদের সঙ্গে আপনাকেও কেমন গুলিয়ে ফেলছে। কেউ একবার আপনার মহানুভবতা বুঝল না!
ববিদা, ভুল বুঝবেন না। এই বাঙালি রামমোহন, বিদ্যাসাগরদেরও ভুল বুঝেছিল। বিবেকানন্দ, রবি ঠাকুরের নামেও কুৎসা করেছে। দুঃখ পাবেন না ববিদা। আপনি এই অর্বাচীন জাতিকে ক্ষমা করুন। বাঙালির মর্যাদা আপনি যেভাবে রক্ষা করেছেন, ইতিহাস আপনাকে ঠিক মনে রাখবে।