সরল বিশ্বাস
সিবিআই নামটা শুনলে কেমন একটা সমীহ হত। মনে মনে কত শ্রদ্ধা আসত। মনে হত, যারা সিবিআই তারা একেবারেই অন্য জাতের মানুষ। তাদের কত বুদ্ধি। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের ক্রমশ হাসির খোরাক করে তুলেছে।
নারদা কাণ্ডেও নিজেদের চূড়ান্ত অপদার্থতার পরিচয় দিয়েছেন সিবিআই কর্তারা। সহজ একটা ব্যাপার, এই ভিডির–র ছবিগুলো সত্যি কিনা। সত্যিই তাঁরা টাকা নিয়েছিলেন কিনা। সেটা যাচাই করতে এত বছর লেগে গেল! সেই কবে থেকে শুনে আসছি, ওই ভিডিও নাকি হায়দরাবাদের ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। সেচটা আসল না জাল, সেটা বুঝতে এত সময় লাগে! এবার ভয়েস স্যাম্পেল। সেটা নিতে কদিন লাগে!
এবার দরকার ছিল ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা। লোকসভার সদস্যদের ক্ষেত্রে চিঠি দিতে হবে লোকসভার স্পিকারকে। আর বিধানসভার সদস্যদের ক্ষেত্রে চিঠি দিতে হবে বিধানসভার স্পিকারকে। একবারে সাড়া না পেলে দ্বিতীয়বার। তাতেও সাড়া না পেলে আরও দু’বার। তারপর না হয় আদালতের মাধ্যমে চিঠি ধরানো যেত। পুরো প্রক্রিয়ার জন্য বড়জোর একমাস। তারপর অন্তত আদালতে জানানো যেত, আমরা পাঁচবার চিঠি দিয়েছি। উত্তর পাইনি। এবার আপনারা বলুন কী করব।
লোকসভার স্পিকার দিনের পর দিন ঝুলিয়ে রাখলেন। তার মানে তিনিও বোঝেন, এই চিঠিতে পাত্তা দেওয়ার কোনও দরকার নেই। হ্যাঁ, এই জায়গায় সিবিআই নিজেদের নামিয়ে এনেছে। এবার রাজ্য বিধানসভার স্পিকার। তিনি দাবি করলেন, কোনও চিঠি তিনি পাননি। সত্যিই বলুন, মিথ্যেই বলুন, পাঁচবার চিঠি পাঠালে এমনটা বলতে পারতেন? হাতে হাতে চিঠি ধরালে এমনটা বলতে পারতেন? আজ বলতে পারছেন, কারণ সিবিআই কর্তারা নির্বোধের মতো কাজ করেছেন।
ছ বছর ঘুমিয়ে থেকে হঠাৎ জেগে উঠলে প্রশ্ন তো উঠবেই। মুখ্যমন্ত্রী ধর্না দিতে চলে যাচ্ছেন। মন্ত্রীরা বিচারপতিকে চমকাতে চলে যাচ্ছেন। হাপ থেকে মাঝারি নেতারা নিজাম প্যালেসের বাইরে লোক জড়ো করছেন। এত সাহস এরা পায় কোত্থেকে? পায়, কারণ, এঁরাও জানেন, সিবিআই নামক বস্তুতি একটি নিষ্কর্মার ঢেকি ছাড়া কিছু নয়। সারদা মামলায় ছড়িয়ে লাট করেছে। যেটা সাতদিনে হয়ে যায়, সেটা সাতবছরেও কিছু করে উঠতে পারেনি। নারদা মামলাতেও এরা প্রায় পাঁচ বছর ঘুমিয়ে ছিল।
রাজীব কুমারকে জেরা করার জন্য তখন কতই না তোড়জোড়। আজ হাইকোর্ট, কাল সুপ্রিম কোর্টে ছুটে বেড়াচ্ছিলেন। সিলংয়ে নিয়ে গিয়ে কী নাটকটাই না চলল। কিন্তু পরে দেখা গেল, রাজীব দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন, সিবিআই কোন এক অজানা গর্তে মুখ লুকিয়েছে। মোদ্দা কথা, একটি অশ্বডিম্ব প্রসব হল।
কেন মুখ্যমন্ত্রী গেলেন, কেন পাল্টা চাপ তৈরি করা হল, এসব নৈতিক না অনৈতিক, সেই তর্ক চলতেই পারে। কেন এরা এত সাহস পায়, সিবিআই বরং সেই আত্মসমীক্ষা করুক।