রক্তিম মিত্র
হঠাৎ জেগে উঠেছেন সুদীপ্ত সেন। আবার তিনি নাকি চিঠি লিখেছেন। আর তা পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে। তাঁর দাবি, তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন বিমান বসু, সুজন চক্রবর্তী, অধীর চৌধুরি, মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী।
তালিকাটার দিকে একবার চোখ বোলান। এই তালিকায় তৃণমূলের কেউ নেই। তবে যদি আগামীদিনে কেউ তৃণমূল ছাড়েন, তখন তাঁর নাম জুড়ে দেওয়া যেতেই পারে। সত্যিই, সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে তৃণমূলের কেউ টাকা নেননি। নিয়েছেন শুধু বিরোধী দলের লোকেরা।
কারা এমন একটা হাস্যকর চিত্রনাট্য বানালেন, তার তদন্ত হওয়া উচিত। এত বড় একটা চিঠি বাইরে বেরিয়ে গেল, সাংবাদিকদের হোয়াটসঅ্যাপে পৌঁছে গেল। নিশ্চয় জেল থেকে সুদীপ্ত সেন নিজে পাঠাননি। তাঁর হয়ে অন্য কেউ পাঠিয়েছেন। রাজ্যের এতবড় সাইবার ক্রাইম দপ্তর আছে। তাঁদের পক্ষে এটা খুঁজে বের করা কি সত্যিই খুব কঠিন?
ধরেই নিলাম, বিমান বসু, সুজন চক্রবর্তীরা টাকা নিয়েছেন। সেটা সুদীপ্ত সেনের মনে পড়তে ৯ বছর লেগে গেল! না বললেন রাজ্য পুলিসকে। না বললেন সিবিআই–কে। হঠাৎ, নেত্রী যখন বিপাকে, তখনই এমন চিঠি সামনে আনতে হল! ডেলোর বৈঠকেও তো নেত্রীকে বলতে পারতেন।
বড্ড কাঁচা চিত্রনাট্য। কারা এমন ভুলভাল চিত্রনাট্য লিখলেন, কে জানে! সত্যিই মুখ্যমন্ত্রীর খারাপ সময় চলছে। এইসব ভুলভাল বুদ্ধি দেওয়া লোকের পরামর্শ নিয়ে তাঁকে চলতে হচ্ছে। বিমান বসু টাকা নিয়েছেন, তাও আবার সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে! এই কথাটা তৃণমূলের একজনকেও বিশ্বাস করাতে পারবেন!
কাকে সৎ বলে মনে করেন? মমতা ব্যানার্জি নাকি বিমান বসু? এই প্রশ্নটা নিয়ে অন্য কারও মতামত নেওয়ার দরকার নেই। শুধু তৃণমূলের মন্ত্রী বা বিধায়কদের মধ্যে ভোট নেওয়া হোক। সেখানেও একেবারে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে মুখ্যমন্ত্রীর। কারণ, বিমান বসুর অনাড়ম্বর জীবন যাপনের কথা তাঁরা অন্তত জানেন। সেটা যে লোকদেখানো নাটক নয়, এটুকুও বোঝেন।
মুকুল রায় নিশ্চয় বিজেপিতে যাওয়ার পর টাকা নেননি। শুভেন্দু নিয়ে থাকলেও নিশ্চয় গত কয়েকদিনে নেননি। তাহলে, এঁদের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী কিছুই জানতেন না। এর পরেও শুভেন্দুকে আটকে রাখার এত চেষ্টা কেন?
যাই হোক, যেটা মনে হচ্ছে, সেটা সরাসরি বলাই ভাল। বুদ্ধিটা যার মাথাতেই আসুক, মুখ্যমন্ত্রীর সম্মতি ছাড়া এমন একটা চিঠি ছড়িয়ে দেওয়ার সাহস কারও হতে পারে! আবার বলছি, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ হয়ত ছিল না। কিন্তু সম্মতি ছিল না, এটা বিশ্বাস করা কঠিন। যদি সত্যি হয়, ভাবতেও অবাক লাগে, একজন মুখ্যমন্ত্রীকে এতখানি নিচে নামতে হল! যদি সত্যি না হয়, যদি সত্যিই এই চিঠি ফাঁসের কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী জড়িত না থাকেন, তাহলে যথাযথ তদন্ত করুন। খুঁজে বের করুন, কে সুদীপ্ত সেনকে দিয়ে এই চিঠি লেখালো। কে গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দিল। যদি এটা খুঁজে বের করতে না পারেন, তাহলে সন্দেহটা বিশ্বাসে বদলে যেতে সময় লাগবে না।