হেমন্ত রায়
তখন ইউ পি এ জমানা। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। খুব আস্তে আস্তে কথা বলতেন। কী বলতেন, ঠিকঠাক বোঝাও যেত না। সেমিনারের বক্তব্য, জনসভার বক্তব্য–সবই যেন একইরকম। আর দশজনের মতো আমারও মনে হত, এ কেমন প্রধানমন্ত্রী? গলার জোর নেই! বলিষ্ঠ বক্তব্য নেই! বিপক্ষকে আক্রমণ করতেই পারেন না!
আসলে, আমরা দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝি না। ভদ্রতা আর ভাঁড়ামির তফাত বুঝি না। এখন কথায় কথায় সস্তা নাটুকে সংলাপ শুনে বুঝতে পারি, আগেরজন কতটা শিক্ষিত ও বিনয়ী ছিলেন। বিহার নির্বাচনের প্রচারেও আরও একবার সেটা বোঝা গেল।
তিনি প্রধানমন্ত্রী। তাঁর শরিক দলের নেতার নীতীশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী। মোদির ভাষায় ডাবল ইঞ্জিন। উন্নয়নের পর্যাপ্ত সুযোগ তো ছিল। কোনও বাধাও ছিল না। নির্বাচনী প্রচারে সরকার সাফল্যের ফিরিস্তি তুলে ধরবে, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু পাঁচ বছরের কাজের প্রচার কই? তার থেকে অনেক বেশি গুরুত্ব পেল প্রায় দু দশক আগে লালু প্রসাদের সরকারের কাজকর্ম। অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়ে গেল পাকিস্তান। রামমন্দির আর চিরাচরিত হিন্দু–মুসলিম তাস তো আছেই।
নিজের পদমর্যাদা ভুলে আক্রমণ করে বসলেন সন্তানসম তেজস্বী যাদবকে। জবাবদিহি করার দায় কার? সরকারের নাকি বিরোধীদের? এই প্রশ্নটাই বারবার গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। একজন প্রধানমন্ত্রী যে ভঙ্গিমায় তেজস্বীকে আক্রমণ করলেন, তা বেশ কুরুচিকরই মনে হয়েছে। এই জাতীয় ভাষার প্রয়োগ অন্তত প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেমানান।
মনমোহন সিং কি কখনও এই ভাষায় বিরোধীদের আক্রমণ করেছেন? মনে পড়ছে না। অন্যান্য প্রধানমন্ত্রীরাও সারাক্ষণ এভাবে নিজেদের ঢাক পিটিয়ে যেতেন বলে শুনিনি। বিরোধীদের এমন কদর্য আক্রমণ করতেন বলে শুনিনি। আসলে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজের চেয়ারের উচ্চতা ও ওজনটাই ভুলে যান। তাই জনসভার মঞ্চ শেষমেষ ভাঁড়ামির মঞ্চ হয়ে দাঁড়ায়।
মনমোহন সিং, ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। সেদিন আপনাকে চিনতে, বুঝতে ভুল করেছিলাম। একবুক অভিমান নিয়ে বলেছিলেন, আমি নিশ্চিত ভবিষ্যতের ইতিহাস আমার প্রতি এতখানি নির্দয় হবে না। এখন বুঝি, সেটা অভিমান ছিল না। কী হতে চলেছে, আপনি আগাম বুঝতে পেরেছিলেন। শুধু আমরাই বুঝতে পারিনি।