একটা অশ্বডিম্ব প্রসব করতে ২৮ বছর লাগল!‌

সঞ্জয় মুখার্জি

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের রায় কী হবে?‌ এ নিয়ে সত্যিই কি কোনও সংশয় ছিল?‌ আমার অন্তত ছিল না। রাম মন্দির সংক্রান্ত রায়ের পর আরও পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল, বাবরি মসজিদের রায় কী হতে চলেছে।

গণতন্ত্রের একের পর এক স্তম্ভ ক্রমশ আস্থা হারাচ্ছে। কোর্টের ওপর তবু মাঝে মাঝে ভরসা জাগে। কিন্তু আবার সে আস্থা হারিয়ে ফেলে।

বাবরি মসজিদ ধ্বংস নাকি আবেগের স্বতস্ফূর্ত বহিপ্রকাশ। এতদিন ধরে বিজেপি নেতাদের কেউ কেউ এমনটা বলে এসেছেন। এবার কোর্টও সেই সুরেই কথা বলল। সেদিন মসজিদ ভাঙার পর মিষ্টি বিলি শুরু হয়েছিল। এবার রায় ঘোষণার পর আরেক প্রস্থ মিষ্টি বিলি।

এমন একটা অশ্বডিম্ব প্রসব করতে ২৮ বছর লাগল!‌ বিচার বিভাগ নিজেকে আর কত হাস্যাস্পদ করবে?‌ এবার আদালত অবমাননার ধারাগুলো বাতিল করা হোক। কারণ, আদালত নিজেই নিজেকে যেভাবে অবমাননা করছে, আর বাইরের লোকের দরকার হবে না।

babri masjid

মেনেই নিলাম, সেটা ছিল স্বতস্ফূর্ত বহিপ্রকাশ। কিন্তু কাজটা ঘৃণ্য ছিল কি?‌ সে কথা স্পষ্ট জানাতে দ্বিধা কোথায়?‌ মেনে নিলাম, এই নেতারা প্ররোচনা দেননি। কিন্তু তাঁরা যে বাবরি ধ্বংস আটকাতে পারেননি, তাহলে তো এই ব্যর্থতা স্বীকার করে নিতে হয়। এই ব্যর্থতার জন্য কোনওদিন ক্ষমা চেয়েছেন?‌ কোনওদিন বলতে পেরেছেন, আমরা ভাঙিনি, কিন্তু যারা এই মসজিদ ভেঙেছে, তারা অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা করছি!‌

আগে না হয় এই বিবৃতি দিতে পারেননি। রায়ের পর লোকদেখানো বিবৃতিও তো দেওয়া যেত। কিন্তু এরপরও কেউ কেউ ভিকট্রি সাইন দেখিয়ে বেরিয়ে এলেন। কেউ কেউ বিজয়োল্লাসে মেতে গেলেন। আদালতের কথা যদি সত্যি বলেও ধরে নিই, তাহলে তো এটাই মেনে নিতে হয়, এই নেতারা সেদিন দলের লোকদের সামলাতে পারেননি। তাঁদের চোখের সামনে মসজিদ ধ্বংস হয়েছে। এটাই যদি রায়ের মূল প্রতিপাদ্য হয়, তাহলে এতে উল্লাস করার কী আছে?‌

এই নেতাদের ওপর আগেও আস্থা ছিল না। এখনও নেই। কিন্তু আদালতের ওপর, বিচার বিভাগের ওপর তো ছিল। তারা কি নিজেদের সেই স্তরে নামিয়ে আনতে চান!‌

রাম মন্দির মামলার যিনি রায় দিয়েছিলেন, অবসরের একমাসের মধ্যেই তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ করা হয়েছিল। এই বিচারপতির কী পুনর্বাসন হয়, দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.