রজত সেনগুপ্ত
সন্ধে নাগাদ হঠাৎ করেই পেলাম খবরটা। বাংলা চ্যানেলগুলো তখনো আড়মোড়া ভাঙেনি। কাকে ধরতে হবে, কোন দিকটা তুলে ধরতে হবে, হয়ত তখনও অনেকে বুঝে উঠতে পারেননি চ্যানেল কর্তারা। জন্ম কখন, কত সালে কোন দপ্তর পেয়েছেন, কখন রাষ্ট্রপতি হলেন, এসব সালতামামি চলতে লাগল। ঘণ্টাখানেক পর কোথাও কীর্ণাহারের বাড়ির ছবি, দুর্গাপুজোর চণ্ডীপাঠ। আবার কোথাও জঙ্গিপুর ভবনের ছবি।
মনে হল, হিন্দি চ্যানেলগুলো একটু দেখা যাক। প্রণব মুখার্জি তো নিছক বাঙালি ছিলেন না। দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বলে কথা। এত বছরের ক্যাবিনেটের নম্বর টু বলে কথা। জাতীয় স্তরে নিশ্চয় অনেকে অনেক রকম স্মৃতিচারণ করছেন। একের পর এক চ্যানেল ঘুরিয়ে চূড়ান্ত হতাশ হলাম। দেশপ্রেমের ধ্বজা ওড়ানো সবথেকে চিৎকার করা চ্যানেলটি সারাক্ষণ ব্যস্ত রইল রিয়া চক্রবর্তী আর তার ভাই শৌভিককে নিয়ে। এমন চিৎকার, এমন উত্তেজনা, যেন মন হচ্ছে দেশে যুদ্ধ লেগে গেল। রাত দশটা পর্যন্ত এইসব কীর্তনই চলল। একটি চ্যানেল তো সারাক্ষণ ভারত–চীন যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে গেল। চীন কী ষড়ষযন্ত্র করছে, ভারত কীভাবে পাল্টা জবাব দিতে তৈরি হচ্ছে, এই কাসুন্দি কতদিন ধরে যে চলবে, কে জানে!
অন্য চ্যানেলগুলিও বেশ দ্বিধাবিভক্ত। কেউ রিয়া নিয়ে, কেউ চীন নিয়ে ব্যস্ত। দেখে বোঝার উপায় নেই কিছুক্ষণ আগেই দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মারা গেছেন। এমনকী অধিকাংশ চ্যানেলে উল্লেখটুকুও নেই। একটি চ্যানেল দিনের বাছাই একশো খবরের ঝলক দেখাচ্ছিল। সেখানেও প্রথম দশে প্রণববাবুর মৃত্যুর খবর নেই। একমাত্র এনডিটিভি উপযুক্ত শ্রদ্ধা জানাল। সীমিত সময়ের মধ্যে যা যা করা সম্ভব। পুরনো ইন্টারভিউয়ের ক্লিপিংস দেখানো হল। জাতীয় রাজনীতির নানা সন্ধিক্ষণে প্রণববাবুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরা হল। আরেকটি চ্যানেলে মৃত্যুর খবর ছিল। কিন্তু সেখানে বোঝা গেল, প্রণববাবুর একমাত্র যোগ্যতা ছিল তিনি দেশের বাড়িতে নিজে পুজো করতেন। আরেকটি চ্যানেলে নেহরু, ইন্দিরা, রাজীব, সোনিয়ার মুণ্ডপাত। প্রণববাবুকে উপযুক্ত গুরুত্ব না দেওয়ার পেছনে রাজীব, সোনিয়াকে তবু না হয় টানা যেতে পারে। কিন্তু এর মধ্যে নেহরু কীভাবে এসে গেলেন, মাথায় ঢুকল না।
এই যদি সর্বভারতীয় চ্যানেলের চেহারা হয়, তবে বোঝাই যাচ্ছে, দেশের মূলস্রোত সাংবাদিকতা কোন খাতে বইছে।