নন্দ ঘোষের হাত থেকে কারও রেহাই নেই। প্রধানমন্ত্রী থেকে রাষ্ট্রপতি, তিনি সবার খুঁত ধরেন। এমনকী রবি ঠাকুর বা নেতাজিরও রেহাই নেই। তাহলে মহানায়কই বা বাকি থাকেন কেন? এত প্রশস্তির মাঝে না হয় একটু ভিন্ন সুর থাকল। পড়ুন নন্দ ঘোষের কড়চা।
খুব মহানায়ক হয়েছেন! কেউ ছিল না, ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে ভাবছেন, বিরাট হনু হয়েছেন। থাকতেন এই সময়ে, আপনার হনুত্ব বেরিয়ে যেত।
ধরা যাক, এন কে সলিল সংলাপ লিখল, ‘মারব এখানে লাশ পড়বে শ্মশানে।’ ক্যামেরার সামনে সেই ডায়লগ দিতে পারতেন? ধরা যাক, আপনি যদি নয়ের দশকে বেঁচে থাকতেন, ছবির নাম হত বাবা কেন চাকর, শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ, ঝিনুকমালা, তোমার রক্তে আমার সোহাগ। বা এই কয়েক বছর আগের ছবি। মন যে করে উড়ু উড়ু, ফাঁদে পড়িয়া বগা কাঁদে, পরাণ যায় জ্বলিয়া রে, খোকা ৪২০, পাগলু ২। এই সব ছবির পোস্টারে যদি আপনার ছবি থাকত, নিজেকে মহানায়ক বলে দাবি করতে পারতেন ?
তখন আপনার লিপে কী অসাধারণ গান? কারা গাইত! শ্যামল, হেমন্ত, মান্না, কিশোর। এখন যদি গাইতে হত পাগলু থোড়া সা করলে রোমান্স, ও মধু আই লাভ ইউ। যেখানে সেখানে নয়, এই গানের শুটিং করানোর জন্য আপনাকে নিয়ে যাওয়া হত আন্টার্কটিকা বা হুনুলুলুতে। বরফের দেশে জামা খুলে, খালি গায়ে নাচতে হত। তখন আর ম্যাটিনি আইডল থাকতেন? আপনার প্রেস্টিজের গ্যামাকসিন হয়ে যেত।
আর জনপ্রিয়তা! সত্যিটা মেনে নেওয়াই ভাল। ভবানীপুর এলাকায় আপনার বাড়ি যত লোক চেনে, তার থেকে ঢের বেশি লোকে চেনে মদন মিত্রর বাড়ি। তাহলে কেন আপনাকে মহানায়ক বলব বলুন তো?
বুঝলেন মশাই, আগে চলে গিয়ে বেঁচে গেছেন। নইলে আপনার যে কী দশা হত! ঋতুপর্ণ তুই-তোকারি করত। আপনার নাম দিত ‘উতুদা’। সুচিত্রা পাত্তা দিত না, নাতনিরাও বলত, চিনি না। বাঁকুড়ায় বা আসানসোলে প্রচারে না গেলে মুনমুনও বলত, ‘চিনি না, হু ইজ হি?’ ধন্যি মেয়ে বা মৌচাকে তো তবু দাদার রোল পেয়েছিলেন, এখন ঠাকুরদার রোলও পেতেন না। টিভিতে ডাক পাওয়ার জন্যও সুমন দে বা মৌপিয়া নন্দীকে ধরতে হত। কেউ মারা গেলে বা পুরস্কার পেলে স্মৃতিচারণের জন্য ডাক পড়ত। ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে পুরনো ছবি সাঁটিয়ে বোঝাতে হত, দেখো, একসময় আমি হনু ছিলাম। সত্যজিতের পাশে আমার ছবি ছিল। প্রসেনজিতের সঙ্গেও আমি অভিনয় করেছি। দেবের সঙ্গেও আমার সেলফি আছে।
ধরা যাক, কয়েক বছর আগে আপনার মোবাইলে কোনও এক মোহতা বা কোনও এক বিশ্বাসের মেসেজ এল। কাল ব্রিগেডের সভায় পাগলু নাচতে হবে। পারতেন? এখন আবার ভার্চুয়াল ব্যাপার। বলা হল, কালীঘাট থেকে কেউ একজন ভাষণ দেবেন। ভবানীপুরে, মদন মিত্রের পাড়ায় জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হবে। মাস্ক পরে মদন মিত্রর পাশে বসে থাকতে হবে। যদি ‘না’ বলতেন, সিনেমা তো দূরের কথা, আর সিরিয়ালেও কাজ পেতেন না। আপনার নামে মেট্রো স্টেশন তো দূরের কথা, বঙ্গভূষণও পেতেন না।
আবার গেলেও বিপদ। ঘোষবাবুরা বলতেন, এই বুদ্ধিজীবীরা সরকারের পা চাটা কুকুর। বামবাবুরা একটু ভদ্রভাষায় প্রতিক্রিয়াশীল–টতিক্রিয়াশীল গোছের কিছু একটা বলতেন। ফেসলবুকের গালমন্দ কী জিনিস, তা তো তখন বোঝেননি। এখন হাড়ে হাড়ে টের পেতেন। আবার যদি পদ্মে ঝুঁকতেন, ধোপা নাপিত বন্ধ হয়ে যেত।
নেহাত তখন জন্মেছিলেন, করে-কম্মে খেয়েছেন। এখন হলে নিরেট বেকার হয়েই থাকতে হত। নয়ত বিনা পয়সায় ওয়েব সিরিজে কাজ করতে হত। উত্তমবাবু, প্লিজ, অধমের কথায় রাগ করবেন না। সত্যিটা মেনে নিন। বাকি মহানায়কদের কাণ্ডকারখানা দেখে আপনারও বোধ হয় আর নিজেকে মহানায়ক বলতে ইচ্ছে করত না। বড়জোর নিজেকে বলতেন, ‘প্রাক্তন মহানায়ক’।
(এটি নিছক মজা। মহানায়ককে ছোট করার কোনও উদ্দেশ্য আমাদের নেই। কিন্তু নন্দ ঘোষের স্বভাবই এমন। সে কাউকেই ছাড়ে না। প্রিয় পাঠক, এই লেখাকে নিছক মজা হিসেবেই দেখুন।)
******
বেঙ্গল টাইমসের মহানায়ক স্পেশাল।
আস্ত ই–ম্যাগাজিন। রয়েছে নানা আঙ্গিকের ১৮ টি লেখা।
পড়তে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন। প্রচ্ছদের ছবিতেও ক্লিক করতে পারেন। তাহলেও পুরো ম্যাগাজিনটি খুলে যাবে।
https://www.bengaltimes.in/BengalTimes-MahanayakSpecial.pdf