রজত সেনগুপ্ত
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় এখন রাজ্য রাজনীতিতে মোটামুটি পরিচিত নাম। কিন্তু দুঃখের কথা, সমানে তাঁকে কংগ্রেস নেতা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। যাঁরা সন্ময়বাবুকে ভালবাসেন, তাঁরাও এই পরিচয়েই তাঁকে চিহ্নিত করছেন। এতে অপরাধের গুরুত্বটা অনেকটাই লঘু করে দেখানো হচ্ছে।
কংগ্রেস নেতা হিসেবে তিনি এলাকায় হয়ত পরিচিত। কিন্তু গত কয়েক মাসে রাজ্য ব্যাপী যে পরিচিতি তৈরি হয়েছে, তা মূলত সাংবাদিকতার জন্যই। শুধু রাজ্যের মধ্যেই বা বলি কী করে? দেশের নানা প্রান্তে, এমনকী দেশের বাইরে থাকা অনেক প্রবাসী বাঙালিও তাঁর লেখার পাঠক। তাঁরাও অপেক্ষা করে থাকেন সন্ময়বাবু নতুন কী ভিডিও আপলোড করলেন।
রাজ্যের একের পর এক অসঙ্গতিকে তুলে ধরেছেন। তথ্য ও যুক্তিকেই হাতিয়ার করেছেন। শালীনতার গন্ডির মধ্যে থেকেও তীব্র আক্রমণ করা যায়, দিনের পর দিন সেই বার্তাই রেখে গেছেন। গত তিন মাসের ভিডিওতে কোথাও নিজেকে কংগ্রেস নেতা হিসেবে তুলে ধরেননি। তিনি আগাগোড়া একজন সাংবাদিকের দাযিত্বই পালন করে গেছেন।
একজন নেতা গ্রেপ্তারের থেকেও একজন সাংবাদিক গ্রেপ্তার, এটা অনেক বেশি নিন্দনীয়। বাংলায় কি প্রতিবাদী কলম ছিল না? কিন্তু শাসকের ধামাধরা হওয়ার একটা প্রতিযোগিতা চলছে নানা জায়গায়। তার ফলে, স্বাধীন, স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বরগুলো হয় হারিয়ে যাচ্ছে, নয়তো ফিকে হয়ে যাচ্ছে। এই আবহে সন্ময়বাবুর কণ্ঠ ভরসা জোগাতো। বোঝা গেল, তাঁর কণ্ঠকে উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। শাসক শিবিরও সত্যি সত্যিই ভয় পাচ্ছে। এটাই সাংবাদিক হিসেবে সন্ময়বাবুর সাফল্য।
কংগ্রেস প্রতিবাদে নামল। সিপিএম নামল। অন্যান্য সংগঠনও নামল। শুধু প্রেস ক্লাব নীরব রইল। সরকারি অ্যাক্রিডিটেশন না থাকতে পারে, মূলস্রোত মিডিয়ার প্রতিনিধিও হয়ত তিনি নন। এমনকী প্রেস ক্লাবের মেম্বারও নন। কিন্তু একজন সাংবাদিককে এভাবে হেনস্থা ও গ্রেপ্তারের পর প্রেস ক্লাবের কিছুই করার নেই! এক লাইন বিবৃতিও দেওয়া যায় না! একের পর এক প্রতিষ্ঠানের মতো এই সংগঠনটাও যে কতটা অসহায়, সেটা আরও একবার পরিষ্কার হয়ে গেল।
আরও একটা দিকে একটু আলো ফেলা দরকার। খড়দা থানার আইসি ও পুরুলিয়ার ডিএসপি— দুজনকে বদলি করা হল। রুটিন বদলি বলা হলেও একসঙ্গে এই দুজনের বদলি নিছক কাকতালীয় হতে পারে না। এঁদের বদলি করে কী লাভ? সরকার যদি মনে করে, এটা অন্যায় হয়েছে, তাহলে দুই পুলিশ অফিসারকে বলির পাঁঠা না করে কাদের নির্দেশে পুরুলিয়ার পুলিশ খড়দায় এসেছিল, সেটা আগে তদন্ত হওয়া দরকার। উপর মহলের নির্দেশ ছাড়া পুরুলিয়ার পুলিশ খড়দা চলে এল, এটা বিশ্বাস করতে হবে? তাহলে কারা নির্দেশ দিলেন? সন্ময়বাবুর ভিডিও গুলো দেখুন, তাহলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।