কুণাল দাশগুপ্ত
‘এই মানুষ ছিল বনমানুষের রূপে/ইতিহাসই বলে/আদলটা তার বদলে গেছে/দিন বদলের ফলে/ শুনে অবাক হয়ো না/কেউ কষ্ট পেয়ো না।’
দৈনন্দিন কাজকর্মের ফলে সত্যিই ভুলে গিয়েছিলাম সত্যিটাকে। সাতের দশকের ময়না ছবির তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গানটা স্মৃতিকে চুটকি মেরে কোথায় যে লোপাট হয়ে গিয়েছিল, তার খোঁজ মেলেনি। আজ আবার খোঁজ পাওয়া গেল মোহনবাগানের কিছু সমর্থকের সৌজন্যে। ‘জাতীয় ক্লাব’এর সমর্থকরা তাদের পেশি উঁচিয়ে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের শতবর্ষের তোরণ ছিঁড়ে ফেলে দিল। জাতীয় ক্লাব? তাই বা বলি কী করে? কে দিয়েছে? কবে দিয়েছে? যদি সত্যিই দিয়ে থাকে, তাহলে তার তো কিছু প্রমাণ থাকবে। সেই প্রমাণটা দিন। নয়তো জাতীয় ক্লাবের ঢাকঢোল পেটানো প্রতিষ্ঠানটির বিপক্ষে এমন বহু তথ্য উঠে আসবে। যেমন, এই ক্লাবের জন্যই দু’বছর নির্বাসিত হতে হয়েছিল ভারতীয় ফুটবলকে। এই ক্লাবেরই রয়েছে এএফসি কাপের গ্রুপ লিগে সবথেকে বেশি গোল খেয়ে বিদায় নেওয়ার রেকর্ড। আজ যাঁরা ইস্টবেঙ্গলের তোরণটির ধ্বংসসাধন করলেন, তাঁরা কি সেই বনমানুষের স্মরণ করেছিলেন? যাঁদের আদল বদলালেও মননটা রয়ে গিয়েছে সেই গাছে থাকার যুগে। কে জানে, শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবের পা পড়বে কবে সভ্যতার উঠোনে।
এর আগেও পাথর ছোঁড়া, ঢিল মারা জাতীয় তালিবানি সংস্কৃতি দেখা দিয়েছিল ময়দানে। তবে, এবারেরটা অভূতপূর্ব। এই ক্লাবের গরিমার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তাঁদের সমর্থকরা কেবলই পেছনের দিকেই হাঁটেন। অতীতটাই তাঁদের ক্রেডিট কার্ড। যত পারো, ভাঙাও। ভাঙাতে ভাঙাতে যে কবে গাছে ফিরে গিয়েছেন, তা ডারউইনবাদী কোনও বিজ্ঞানীও অনুধাবন করতে পারবেন না। দিনের বদল হল, যুগের বদল হল, আদলের বদল হল, তবু এঁরা গাছ থেকে মাটি খুঁজে পেলেন না। সেই সাতের দশকেরই ‘হোটেল স্নো ফক্স’—এর মান্না দের গাওয়া গানটি মনে করিয়ে দিল তাণ্ডবকারীরা। ‘ডারউইন সাহেবের মতে নাকি বাঁদর থেকে মানুষ হয়েছিল। আর আমি যদি বলি, এই যুগে মানুষ থেকে আবার বাঁদর হল।’ কোনটা ঠিক, তা আমাদের মস্তিষ্কের র্যাডারের বাইরে। সেটা আজকের সবুজ মেরুণ সমর্থকেরাই ঠিক করুন।