ধীমান সাহা
সময়টা ২০০১। আজ থেকে ১৯ বছর আগে। মমতা ব্যানার্জি তখন বাজপেয়ী সরকারের রেলমন্ত্রী। কোনও কোনও মিডিয়া পরিবর্তনের ঝড় তুলতে শুরু করে দিয়েছে। ঠিক তখনই খুন হলেন বিকাশ বসু। একসময়ের দাপুটে তৃণমূল নেতা। সেই খুনে মূল অভিযুক্ত ছিলেন এই অর্জুন সিং। অভিযুক্ত মানে যে কেউ একটা হাওয়ায় ভাসিয়ে দিল, এমন নয়। প্রকাশ্যেই অর্জুনের নামে অভিযোগ জানিয়েছিলেন বিকাশের স্ত্রী মঞ্জু বসু।
সেই সময়ের পুলিশ রেকর্ড ও খবরের কাগজ ঘাঁটলেই এই সব অভিযোগের কথা পাওয়া যাবে। তখন রাতারাতি মঞ্জু বসুকে টিকিট দেওয়া হল নোয়াপাড়ায়। আর অর্জুন সিং টিকিট পেলেন ভাটপাড়ায়। দুজনেই সেবার নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিধানসভায় পাশাপাশি বসতে শুরু করলেন অর্জুন সিং আর মঞ্জু বসু। ক্ষমতা এমনই এক জিনিস, রাগ–অভিমান–ঘৃণা সব চলে যায়। তখন ক্ষমতাই শেষ কথা। মঞ্জু বসুও যতদিন বিধায়ক রইলেন, দিব্যি ভুলে রইলেন স্বামীর খুনের কথা। সেই খুনে অভিযুক্তর পাশে বসতেও তাঁর বিন্দুমাত্র দ্বিধা হয়নি।
সময় এগিয়েছে নিজের নিয়মে। অর্জুনের প্রভাব–প্রতিপত্তি অনেকটাই বেড়েছে এই ১৯ বছরে। ভাটপাড়া মানেই অর্জুন সিং। ব্যারাকপুর মানেই অর্জুন সিং। এমনকী, এখন নোয়াপাড়া মানেই অর্জুন সিং। পরপর দুবার দীনেশ ত্রিবেদীকে জেতানোর পেছনেও বড় ভূমিকা এই অর্জুন সিংয়ের। এখন তিনি স্বপ্ন দেখতেই পারেন এম পি হওয়ার। সেই স্বপ্ন পূরণ না হওয়ায় অন্য দলে যেতেও আপত্তি নেই।
এবার নিশ্চয় অর্জুন খুব খারাপ লোক হয়ে যাবেন। পুরনো মামলাগুলো নিশ্চয় আবার খুঁচিয়ে তোলা হবে। বলা হবে, তিনি একজন ক্রিমিনাল ছিলেন, গুন্ডা ছিলেন। আরও কত বিশেষণে ভূষিত করা হবে। কত নতুন নতুন মামলা জন্ম নেবে। কিন্তু পুরানো কথা কে আর মনে রাখে! বঙ্গজ মূলস্রোত মিডিয়া রোজকার ঘটনাতেই চোখ বুজে থাকে। ১৯ বছরের পুরনো ঘটনা তো ফসিল হয়ে গেছে।
এখন অর্জুন বিজেপি–তে গেছেন বলে কারও কারও কাছে তিনি একেবারে মহাভারতের অর্জুন হয়ে গেলেন। আবার কারও কারও কাছে দুঃশাসন হয়ে গেলেন। মুখ্যমন্ত্রীও নানা বিশেষণ ছাড়লেন বলেন।
কেউ খুন হলে চটপট তাঁর স্ত্রীকে টিকিট দেওয়ার প্রবণতাটা এখনকার নয়। ১৯ বছর আগেও ছিল। তখনও মঞ্জু বসুকে চুপ করানোর জন্য নোয়াপাড়ার টিকিট দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি, অর্জুন সিংকেও চটাতে চাননি। তাই পাশের কেন্দ্র ভাটপাড়ায় তাঁকেও টিকিট দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ, হঠাৎ অর্জুন ‘ক্রিমিনাল’ হয়ে গেলেন, ব্যাপারটা মোটেই এমন নয়। তিনি খুনের আসামি, এটা জানার পরেই তাঁকে টিকিট দেওয়া হয়েছিল। তাই অর্জুনকে গালাগাল দেওয়ার আগে, সেই ইতিহাসটাও জানা দরকার।