শীত এলেই ওরা হাজির। বছরের পর বছর পরিযায়ী পাখিরা হাজির হয়ে যায় সাঁতরাগাছির ঝিলে। কেমন আছে সেই পরিযায়ীর দল? খোঁজ নিয়ে এলেন সংহিতা বারুই।
শীতের আগমন বার্তা নিয়ে হাজির হয় নানা ধরণের বাহারি ফুল ও পাখির দল । দেশ কাল সীমানার বেড়াজাল পেরিয়ে শীত পড়তেই আমাদের রাজ্যের বেশ কয়েকটি জায়গায় এসে ভিড় জমিয়েছে পরিযায়ী পাখির দল।
এই সময় সেই পরিযায়ী পাখির দঙ্গলে তাকালে যেন মনে হয় সুদূর সাইবেরিয়া আর বাংলা কোথাও যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে । প্রতিবছর আশ্বিনের শেষ থেকে ফাল্গুনের মাঝামাঝি পযন্ত এদের স্থায়িত্ব বাংলার বুকে । তারপর ভরা সংসার নিয়ে নিজের দেশে ফিরে যাওয়া। আগে এদের ঠিকানা ছিল ও মূলত কলকাতা র আলিপুর চিড়িয়াখানা সংলগ্ন ঝিল । কত শত নাম না জানা সেই সব পরিযায়ী পাখিরা কার্যত অতিথি হয়ে একটু উষ্ণতার খোঁজে চলে আসত কলকাতার বুকে । আজ আলিপুর ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অংশের ছড়িয়ে পড়েছে এই সমস্ত পরিযায়ীর দল।
সাঁতরাগাছি , সুন্দরবন , পূর্বস্থলি , রায়গঞ্জ , পশ্চিম মেদিনীপুর সহ বহু জায়গায় যেখানে ঝিল রয়েছে সেখানে এসেই জায়গা নিয়েছে এই পরিযায়ী রা । তবে প্রতিবছরের মতো এবছর ও শীত পড়তেই ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী এসে জায়গা নিয়েছে সাঁতরাগাছি ঝিল চত্বরে ।
যে রঙ বেরঙ্গা পরিযায়ী দের দেখতে শুধু দেশি পর্যটকরাই নয়, ক্যামেরা হাতে এই সাঁতরাগাছি ঝিলে ভিড় জমাচ্ছেন বিদেশি পর্যটকেরাও । পক্ষী বিশেষজ্ঞ দের মতে, সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে এই পরিযায়ী দল চলে যায় গোপন আস্তানায় । সেখানে ই রাত্রিবাস করে তারা । এর পর সূয ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তারা ফিরে এসে ঝিল চত্বরে । সারা দিন ধরে চলে প্রেমালাপ থেকে হুটোপুটি ।
এদের মধ্যে এক প্রজাতির পরিযায়ী পাখি হল সরাল , বামুনিয়া, খণ্ডে, গ্যাওয়াল প্রভৃতি । মূলত এরা হাঁস প্রজাতির পরিযায়ী। তবে এবার পরিযায়িদের ভিড়ে নজর কেড়েছে নতুন প্রজাতির নাকচা । এদের ডানা দুটি কালো , পেট টা সাদা । এই পরিযায়ীরা সাঁতরাগাছির ঝিলে ই সারা শীতটা কাটিয়ে ছোট মাছ,শামুক, গেরি-গুগলি খেয়ে ই উদর পূতি করে । এই সময় দিনভর ধরে চলে ওদের মধ্যে মন দেওয়া নেওয়ার পালা । এরপর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহেই ডিম পাড়ে এরা । ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার এক সপ্তাহ পর থেকেই বাবা মায়ের সঙ্গে ডানা মেলতে শেখে এরা ।
মাস খানেকের মধ্যেই ছোট পরিযায়ীরা বাবা মায়ের সঙ্গে সমান তালে উড়তে শিখে যায় । আস্তে আস্তে সব খাবার শিকার করে ও শিখে যায় নানা শিকারের পদ্ধতি ।এরপর ডানা মেলে ওরা উড়ান দেয় দূরের নীল আকাশে। বড় বড় পাখিদের ওড়ার গতিবেগ থাকে ঘণ্টায় সত্তর থেকে আশি কিলোমিটার ।
তবে বাচ্চা থাকলে সেই ক্ষেত্রে বাবা মা পাখিরা তাদের ওড়ার গতি অনেক টাই শ্লথ করে দেয়। শীত ফুরিয়ে বসন্ত আসে। এবার ঘরে ফেরার পালা। তার অবশ্য পাসপোর্ট বা ভিসা লাগে না। পাখির কোনও সীমান্ত নেই। এক ঝিল থেকে হয়ত আবার অন্য কোনও ঝিলে। এক দেশ থেকে হয়ত অন্য কোনও দেশে।