আজ শ্রীকান্ত মোহতা বুঝলেন, কাল অন্য কেউ বুঝবেন

রজত সেনগুপ্ত
বেশি টাকা থাকলে কী হয়?‌ উত্তর ছিল, ছবির পোস্টারে সত্যজিৎ রায়ের ওপরে আর ডি বনশলের নাম থাকে। এমনই এক কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন দীপ্তেন্দ্র কুমার সান্যাল।
এখনকার পরিচালকরা কেউ হয়ত সত্যজিৎ রায় নন। কিন্তু আর ডি বনশলের চেয়েও প্রভাবশালী প্রোডিউসার কিন্তু টলিউডে আছেন। যাঁর একটা এস এম এসেই হাজির হয়ে যেত তামাম টলিউড। কীসের দাবিতে মিছিল, তা আর জানার দরকার নেই। তিনি ফরমান জারি করেছেন, অতএব সব কাজ ফেলেও যেতে হবে। কে কাজ পাবে, কে পাবে না, কে কোন চরিত্র করবে, সবই যেন তাঁর মর্জিতে ঠিক হত।
কার কথা বলা হচ্ছে, বুঝতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। কী পরিহাস দেখুন, সেই শ্রীকান্ত মোহতা এত এত ফিল্মস্টারদের মিছিলে হাঁটালেন। সভায় হাজির করলেন। অথচ, তিনি যখন জেলে গেলেন, তাঁর পাশে কাউকেই সেভাবে দাঁড়াতে দেখা গেল না। যাঁদের জন্য গোটা টলিউড বাহিনীকে দিনের পর দিন জড়ো করলেন, তাঁরাও প্রকাশ্যে পাশে দাঁড়াল না। দায়সারা গোছের কয়েকটা বিবৃতি দিয়েই কাজ সারল।

srikant mohta
সিবিআই কর্তারা যখন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এলেন, তাঁর একটা ফোনে কয়েকজন পুলিশকর্তা এসেছিলেন ঠিকই, কিন্তু তাঁরাও রণে ভঙ্গ দিলেন। ভাড়া করা বাউন্সারের দল হুমকি দিল ঠিকই। তাঁরাও সেই রণে ভঙ্গ দিল। তবে শ্রীকান্ত মোহতা ভেবেছিলেন টলিউডে বোধ হয় প্রতিবাদের বন্যা বয়ে যাবে। কিন্তু কাউকেই তো সেভাবে সোচ্চার হতে দেখা গেল না। এমনকী সোশ্যাল মিডিয়াতেও কেউ সরাসরি পাশে দাঁড়ালেন না।
হ্যাঁ, তারকারা এরকমই হয়। দরকারে পায়ে পড়তে (‌বাকিটুকু অনুমান করে নিতে পারেন)‌ দ্বিধা করে না। কিন্তু বিপদ বুঝলে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যাওয়া। শ্রীকান্ত মোহতার ওপর নানা কারণে অনেকের রাগ থাকতেই পারে। কিন্তু যাঁরা প্র‌ত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উপকৃত হয়েছেন, তাঁদের তো কিছুটা কৃতজ্ঞতা থাকারই কথা। কিন্তু তাঁরাও এভাবে মুখ ফিরিয়ে নিলেন!‌ লকেট বোমা ফাটিয়েছেন। বলেছেন, টলিউড সিন্ডিকেটের একটা উইকেট পড়ল। যদি সুযোগ থাকত, আরও অনেকেই বলতেন।
আসলে, যতদিন ক্ষমতা থাকে, যতদিন মাথায় বিশেষ কারও আশীর্বাদের হাত থাকে, ততদিন এই শ্রীকান্ত মোহতারা ধরাকে সরা জ্ঞান করেন। শাসক দলের ভেতরে নিশ্চিতভাবেই টেনশন শুরু হয়ে গেছে। জেরার মুখে কখন কার নাম বলে দেন, কে জানে!‌ কোন অপকৃর্তী ফাঁস করে দেন, কে জানে!‌ যদি সত্যিই অপ্রিয় কিছু বলে ফেলেন, তাহলে সেই আশীর্বাদের হাতও নিশ্চিতভাবেই সরে যাবে। তখন দেখা যাবে, রাজ্য পুলিশই তাঁর নামে নানা রকম মামলা করে চলেছে। তখন দেখা যাবে একে একে ঝিঙ্কু–‌মামনিরা অনেকেই মুখ খুলছেন।
এই গ্রেপ্তারি তাহলে কী বার্তা দিল?‌
১)‌ টলিউড বাহিনীকে যতই নিয়ন্ত্রণ করুন, মনে মনে অনেকেই তাঁকে বিশেষ পছন্দ করতেন না।
২)‌ তাঁর দাদাগিরি অনেকের কাছেই অসহ্য হয়ে উঠেছিল। আপাতত তিনি শ্রীঘরে যাওয়ায় অনেকেই হাফ ছেঁড়ে বাঁচলেন।
৩)‌ বিপদে পড়লে এই তারকারা পাশে থাকে না। এমনকী সরকারও পাশে থাকে না।
৪)‌ আজ শ্রীকান্ত মোহতা বুঝলেন। কাল হয়ত অন্য কেউ এই চরম সত্যিটা বুঝবেন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.