মিডিয়া সমাচার
নির্মল দত্ত
ব্রিগেডে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের যদি প্রশ্ন করা হত, মমতা ব্যানার্জি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কতখানি যোগ্য? যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা কী বলতে পারতেন? নিতান্তই এমন প্রশ্ন এলে সবাইকেই কিছু না কিছু বলতে হত। বলতেই হত, তিনি যোগ্য। তিনি জনপ্রিয়। নেতৃত্ব দিতেই পারেন।
তার মানে কি এই যে এই লোকেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মমতাকে চাইছেন? ঠিক সেটাই হয়েছে কুমারস্বামীর ক্ষেত্রে। যদি তিনি সত্যিই মমতা ব্যানার্জিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাইতেন, তাহলে তো ব্রিগেডের মঞ্চ থেকেই বলতে পারতেন। তাহলে অনেক বেশি হাততালি পেতেন। তাছাড়া, সেক্ষেত্রে ব্রিগেডটাই ছিল উপযুক্ত মঞ্চ। তা না করে তিনি নিজের রাজ্যে ফিরে মমতাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাইলেন!
আসলে, আমার মনে হয় এটা বাংলা মিডিয়ার একটা পরিণতিবোধের অভাব। অথবা, কাউকে অত্যধিক খুশি করতে গিয়ে নিজেদের বোধ বুদ্ধিকে শিঁকেয় তুলে রেখেছেন। যেহেতু স্ট্যালিন বা তেজস্বী রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চেয়েছেন, তাই বেচারা কুমারস্বামীর ব্যাখ্যাকে উল্টো দিকে চালিয়ে দেওয়া হল। বলা হচ্ছে, স্ট্যালিন, তেজস্বীরা নাকি ডিগবাজি মারলেন। এতে ডিগবাজির কী হল? মমতার ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁরা ব্রিগেডে এসেছিলেন ঠিকই, কিন্তু তাঁরা কি একবারও বলেছিলেন যে, মমতাকে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চাই? তাহলে ডিগবাজির প্রশ্ন আসছে কোত্থেকে? স্ট্যালিন তো অনেক আগে থেকেই রাহুলের নামে দাবি জানিয়ে আসছেন। আসলে, জোর করে কাউকে খুশি করতে গিয়ে স্ট্যালিন–তেজস্বীদের নামে ডিগবাজির তকমা এঁটে দেওয়া হল।

এবার কুমারস্বামী। কর্নাটকে তাঁর সরকার টিকে আছে কংগ্রেসের সমর্থনে। তাঁর পক্ষে অন্য কারও নাম বলা সম্ভব? এবার যদি একান্তই প্রশ্ন আসে, আঞ্চলিক দলের যদি কেউ হয়, তাঁকে স্বাগত জানাবেন? তখন কী বলবেন? তখন তিনি বলেছেন মমতার কথা, মায়াবতীর কথা। বলেছেন, আঞ্চলিক দলেও অনেকেই আছেন যাঁরা যোগ্য। ব্যাস, বাংলা মিডিয়া তুষ্ট করার একটা উপাদান পেয়ে গেল। অমনি বিভিন্ন কাগজের প্রথম পাতায় বেরিয়ে গেল, মমতাকে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চান কুমারস্বামী। পাড়ায়, চায়ের দোকানে গুলতানি শুরু হয়ে গেল।
আসলে, পুরোটাই বাংলা মিডিয়ার না–বোঝার ফল। অতি উৎসাহের ফল। কাউকে তুষ্ট করতে চাওয়ার ফল। জোটের হাওয়াকে গুলিয়ে দেওয়ার জন্য, আরও ঝগড়া বাঁধিয়ে দেওয়ার জন্য বিজেপি পন্থী কিছু জাতীয় মিডিয়াও এই প্রচারে সামিল হল। আর সেই ফাঁদেই হয়ত পা দিল বাংলা মিডিয়াও।
নিশ্চিত করেই বলা যায়, কুমারস্বামী মোটেই এমনটা বলতে চাননি। কংগ্রেস যেন তাঁকে ভুল না বোঝে, সেই কারণে তাঁকেও নিজে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। তখন তিনি হয়ত বলবেন, আমি এভাবে বলতে চাইনি। তখন বাংলা মিডিয়া ফের বলবে, ডিগবাজি খেলেন কুমারস্বামী।
না, কুমারস্বামীর ডিগবাজি নয়। বাংলা মিডিয়ার অতিরিক্ত চাটুকারিতা আর অপরিণানদর্শিতার ফল। সেই লজ্জা ঢাকতে অযথা আসামী করা হবে বেচারা কুমারস্বামীকে।
