সত্যিই যদি পুলিশ এত তৎপর হত!‌

অজয় কুমার

পুলিশের তৎপরতা দেখে অবাক না হয়ে পারি না। সত্যিই কী তৎপরতা। শিলিগুড়ির পুলিশ চলে এল হাওড়ায়। আত্মীয় বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে ফের শিলিগুড়িতে নিয়ে যাওয়া হল সুকৃতী আঁশকে। কে এই সুকৃতী, তা আর বলে দেওয়ার দরকার নেই। পুলিশের কল্যাণে এতদিনে তাঁর নাম সারা রাজ্যই জেনে গেছে।

সুকৃতী নিশ্চয় দাগি আসামী। নিশ্চয় খুন–‌টুন করেছেন। এই তরুণী চেয়েছিল দাড়িভিট কাণ্ডে সঠিক বিচার হোক। যাদের গুলিতে দুজন ছাত্রের প্রাণ গেল, তাদের শাস্তি হোক। নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। পুলিশ প্রশাসন, রাজ্য প্রশাসন যখন প্রথম থেকেই ধামাচাপা দিতে তৎপর, তখন অন্যান্য ছাত্রদের মতো তিনিও গর্জে উঠেছিলেন। তারই খেসারত দিতে হল। ধরে আনা হল কিনা হাওড়া থেকে।

sukriti2

১)‌ মূল অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুল পোড়ানো হচ্ছিল। সবিনয়ে জানতে চাই, কুশপুতুল পোড়ানো কি সত্যিই বেআইনি?‌ আগে তৃণমূল কত হাজারবার জ্যোতি বসু বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যদের কুশপুতুল পুড়িয়েছে, সেই বিতর্কে যাচ্ছি না। এখনও মাঝে মাঝেই তৃণমূল নেতা–‌মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর কুশপুতুল পোড়ানো হয়। প্রশ্ন হল, কুশুপুতুল পোড়ানো অন্যায় নাকি শুধু মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুল পোড়ানো যাবে না?‌ কই, প্রধানমন্ত্রীর কুশপুতুল যখন পোড়ানো হয়, তখন তো পুলিশের কোনও তৎপরতা চোখে পড়ে না। আগামীদিনে এই কারণে কজন তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করতে পারেন, দেখার অপেক্ষা রইল।

২)‌ এমনিতেই কুশপুতুল পোড়ানোর পর আন্দোলন থেমে যায়। কিছুক্ষণ পর ওঁরা নিজের নিজের বাড়ি ফিরে যেতেন। তার বদলে পুলিশ অতি সক্রিয় হতে গিয়ে অহেতুক বিষয়টাকে জটিল করল। যে সুকৃতীর নাম প্রায় কেউই জানতেন না, সেই সুকৃতীকে সারা রাজ্যে পরিচিত করে তুলল পুলিশের হঠকারিতা।

৩)‌ এই স্তাবকেরা ভেবে থাকেন, এতে বোধ হয় সরকারের লাভ হবে। এটা যে হঠকারিতা, এটার যে কোনও দরকার ছিল না, এটা বলার মতো বুকের পাটা তৃণমূলে কজনের আছে?‌ এতে কি সত্যিই দলের বা সরকারের লাভ হল?‌ এতে কি সত্যিই মুখ্যমন্ত্রীর ভাবমূর্তি উজ্বল হল?‌

৪)‌ রাজ্য জুড়ে পুজোর উৎসব। তার মাঝে এক মহিলা নেত্রীকে কিনা হাওড়া থেকে ধরে আনা হচ্ছে শিলিগুড়িতে। একের পর এক মিথ্যে মামলায় জড়ানো হচ্ছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা। মহিলাদের ওপর অবিচার নিয়ে একসময় তিনি কত আন্দোলন করেছে। আর আজ তাঁর পুলিশ কী অবলীলায় অতি সক্রিয়তা দেখিয়ে ছাত্রনেত্রীকে লঘু কারণে জেলে ভরছে।

৫)‌ গোটা রাজ্য জুড়ে পঞ্চায়েত ভোটে চূড়ান্ত প্রহসন হল। পুলিশকে কার্যত মেরুদণ্ডহীন মনে হয়েছে। একের পর এক বোর্ডগঠনকে ঘিরে মারামারি, বোমাবাজি। তখন কোথায় পুলিশের সক্রিয়তা?‌ এক তরুণীকে জেলে ঢুকিয়ে যাদের বীরত্ব দেখাতে হয়, সেই পুলিশের ধিক্কার ও ঘৃণাই প্রাপ্য।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.