মেট্রোয় শৌচাগারঃ এত গড়িমসি কেন ?

দিব্যেন্দু দে

আমাদের দেশে পুরানো নিয়মগুলো কিছুতেই পাল্টায় না। সময় পাল্টে যায়, প্রজন্ম পাল্টে যায়। মানুষের জীবন যাপন বদলে যায়। কিন্তু অদ্ভুত নিয়মগুলো থেকেই যায়। তেমনই একটি অদ্ভুত নিয়ম চলে আসছে মেট্রো রেলে। এতটা লম্বা পথ। কিন্তু কোনও স্টেশনে কোনও শৌচাগার নেই। দিনের পর দিন যাত্রীদের সমস্যা বুঝেও বুঝতে চান না মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। অথচ, সহজেই এই সমস্যাটার সমাধান করা যেত।

মেট্রো যখন চালু হয়েছিল, তখন এসপ্লানেড থেকে চলত টালিগঞ্জ। মোটামুটি ১৩-১৪ মিনিটের পথ। তখন এত যাত্রী হত না, এত লাইন পড়ত না। শৌচাগার না থাকলেও চলত। কিন্তু তারপর মেট্রোর গতিপথ উত্তরের দিকে বেড়ে হল দমদম পর্যন্ত। তারপর বাড়ল দক্ষিণে। একেবারে নিউ গড়িয়া পর্যন্ত। কিন্তু এত লম্বা যাত্রাপথে শৌচাগার দরকার, এটা রেল কর্তৃপক্ষের মাথায় এল না।

metro station

অনেক বয়স্ক যাত্রী যাতায়াত করেন। শিশুরা যাতায়াত করে। মহিলারাও যাতায়াত করেন। তাঁদেরকে নানা সমস্যায় পড়তে দেখেছি। অনেক শিশুকে অসহায় হয়ে মেট্রো স্টেশনের একটু বাইরে হিসি করতে দেখেছি। প্রথমত, স্টেশনের আশেপাশে শৌচাগার নেই। বেরিয়ে রাস্তায় পাওয়া যাবে, এমন নিশ্চয়তাও নেই। তাহলে একজন মানুষ কীসের ভরসায় ট্রেনে চড়বেন ? শুধু যাত্রাপথটুকু দেখলে হবে না। আরও অনেক বাড়তি সময় চলে যায়। ১) নিচে নামতে কিছুটা সময়। ২) টিকিটের লাইনে কিছু সময় ৪) প্ল্যাটফর্মে আসতে কয়েক মিনিট। ৫) প্ল্যাটফর্মেও পরের ট্রেনের জন্য লম্বা অপেক্ষা। ৬) যদি ভিড়ের কারণে সেই ট্রেন ছাড়তে হয়, তাহলে তার পরের ট্রেনের জন্য অপেক্ষা। ৭) স্টেশন থেকে বেরোতেও আরও সাত-আট মিনিট। সবমিলিয়ে যেটুকু যাত্রাপথ, তার সঙ্গে আরও ২০-২৫ মিনিট ধরে রাখুন। মুশকিল হল, এই সময়টা কেউ হিসেব করে না। একজন সুগারের রোগীর পক্ষে এতটা সময় থাকা যে কী সমস্যার, তা রেল কর্তৃপক্ষ বোঝেন না।
তাঁদের যুক্তি, প্ল্যাটফর্ম নোঙরা হয়ে যাবে। যেন পৃথিবীতে আর কোনও পরিচ্ছন্ন জায়গায় শৌচালয় নেই। ট্রেনে যদি দেওয়া সম্ভব নাও হয়, নিদেনপক্ষে প্ল্যাটফর্মে তো হতে পারে। এর জন্য মানবাধিকার কমিশনকে উদ্যোগ নিতেই বা হবে কেন ? তাও শোনা যাচ্ছে, মাত্র তিনটি স্টেশনে নাকি এই ব্যবস্থা হবে । বাকি স্টেশনগুলিতে ? অর্থাৎ, এখনও সেই গড়িমসি চলছে। আটের দশকে হয়ত তেমন দরকার ছিল না, কিন্তু ২০১৬ সালে সেটা অনিবার্য। সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা মানে বাস্তবকে অস্বীকার করা।
মেট্রো স্টেশনে তো জায়গার অভাব নেই। তখন না হয় দূরদর্শিতা ছিল না। কিন্তু এখন যখন জোরালো দাবি উঠছে, তখন সেই উদ্যোগ নিতে বাধা কোথায় ?

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.