চাই না থ্রি স্টারের তকমা, বাঙালিকে ঘুরতে দিন

স্বরূপ গোস্বামী

বর্ষাকালে জঙ্গল এমনিতেই বন্ধ থাকে। পাহাড়েও তেমন ভিড় হয় না। বাঙালির মন উড়ু উড়ু হবে ফের পুজোর আগে। মোটামুটি শীতজুড়ে এই উড়ু উড়ু ভাব থাকবে। গরমের শুরুতেও পাহাড় যাওয়ার একটা ঝোঁক থাকে। কিন্তু বর্ষার এই সময়টায় বাঙালি সমুদ্র ছাড়া তেমন বাইরে যায় না।

তাই এই সময়টাকে সংস্কারের জন্য বেছে নিয়েছে পর্যটন দপ্তর। বিভিন্ন হোটেল, রিসর্টগুলিকে এই সময় সংস্কার করা হবে। সময়টা নিয়ে কোনও প্রশ্ন এই। কারণ, সংস্কারের এটাই উপযুক্ত সময়। এই সময় তেমন চাহিদা থাকে না। যদি পুজোর আগে তৈরি করে ফেলা যায়, মন্দ কী?‌

wbtdc

কিন্তু পর্যটন দপ্তরসূত্রে নাকি বলা হয়েছে, রিসর্টগুলিকে থ্রি স্টার হোটেলের চেহারা দেওয়া হবে। বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য নাকি ভোট পাল্টে দেওয়া হবে। এটাই আশঙ্কার। কারণ, এই রাজ্যের পর্যটন শুধু বিদেশিদের ভরসায় এগিয়ে যাবে, এটা যাঁরা ভাবেন, পর্যটনের আসল ছবিটা বোধ হয় তাঁদের অজানা।

বেড়াতে যান মূলত মধ্যবিত্ত বাঙালি। যে কোনও পর্যটন সংস্থায় খোঁজ নিয়ে দেখুন, অন্তত সত্তরভাগ মধ্যবিত্ত বাঙালি সেখানে নাম লেখান। এমনকী কোনও ভ্রমণ সংস্থায় নাম না লিখিয়ে নিজেদের উদ্যোগে বেড়াতে যাওয়ার তালিকাতেও সেই মধ্যবিত্ত বাঙালির পাল্লাই ভারি। তাঁদের কাছে বাজেট একটা বড় ফ্যাক্টর। এমনিতেই গত কয়েক বছরে সরকারি বাংলোগুলোর চার্জ অনেকটাই বেড়ে গেছে। একটি ঘরের একদিনের ভাড়া আড়াই হাজার, তিন হাজার পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে। চারদিন থাকতে গেলে অন্তত হাজার দশেক শুধু থাকার খরচ। মধ্যবিত্ত বাঙালিকে দশবার ভাবতে হয়। বাধ্য হয়েই তাঁরা বেসরকারি সস্তার হোটেল খোঁজেন।

kalimpong

তার ওপর সরকার কিনা বিদেশি পর্যটকদের কথা ভেবে থ্রি স্টারের আদল আনতে চাইছে। তার মানে, একেবারে সাধারন রুমের ভাড়াও পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। একেক দিনের ভাড়া যদি হাজার পাঁচেক হয়, বাঙালি আগের মতো ঘুরতে পারবে?‌ সংস্কার ছাড়াই যখন এত ভাড়া, সংস্কার হলে না জানি কত ভাড়া হবে!‌ সংস্কারের পর যুব আবাসের ভাড়া এক লাফে ৬ থেকে ৭ গুন বেড়ে গেছে। এসি–‌র ক্ষেত্রে এই ভাড়া পনেরো গুন পর্যন্ত বেড়েছে। পর্যটন দপ্তরের কটেজগুলির ভাড়াও সেরকম বেড়ে যাবে না তো?‌ ছ গুন বা সাত গুন তো অনেক বেশি, যা আছে, তার দ্বিগুনও যদি হয়ে যায়, মধ্যবিত্ত বাঙালির সাধ্যের একেবারে বাইরে চলে যাবে।

যাঁরা থ্রি স্টারের তকমা দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন, তাঁদের হাতে যদি এই রাজ্যের পর্যটনের ভার থাকে, তাহলে সত্যিই চিন্তার বিষয়। দোহাই, থ্রি স্টারের মোহ থেকে বেরিয়ে আসুন। দু একটা অভিজাত কটেজ হতেই পারে। কিন্তু সব কটেজকে এমন আকাশছোঁয়া ভাড়ার থ্রি স্টার কটেজ নাই বা করলেন!‌ এই উদ্ভট পরীক্ষা নিরীক্ষা বাঙালিকে আরও পর্যটন বিমুখ করে তুলতে পারে। গুটিকয় অভিজাত পর্যটক বাড়াতে গিয়ে আম বাঙালিকে পর্যটন থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া কি খুব জরুরি?‌ চাই না থ্রি স্টারের তকমা। বাঙালিকে মনের আনন্দে ঘুরতে দিন।।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *