রাজীব চৌধুরি
পর্যটন নিয়ে খামখেয়ালিপনা আর যাচ্ছে না। সরকার মুখে পর্যটনকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছে ঠিকই। কিন্তু কাজকর্মে তার তেমন প্রতিফলন পাওয়া যাচ্ছে না। এমন এমন লোকেদের পর্যটনমন্ত্রী করা হচ্ছে, বাংলার জেলা সম্পর্কে যাঁদের স্বচ্ছ ধারনা নেই। নয়ত কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা নেই। আর নইলে, গুরুত্ব নেই।
রচপাল সিং পর্যটনমন্ত্রী ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী যতবার পাহাড়ে গেছেন, কোনওদিন তাঁকে নিয়ে গেছেন বলে মনে পড়ছে না। পর্যটনমন্ত্রী নেই, অথচ পর্যটন সচিব আছেন। মন্ত্রীকে কীভাবে প্রতি পদে উপেক্ষা করতে হয়, তা মুখ্যমন্ত্রী বারবার দেখিয়ে দিয়েছেন।
এরপর হলেন ব্রাত্য বসু। সারাক্ষণ নাটক আর দমদম নিয়েই ব্যস্ত। তাঁকেও মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে নিয়ে গেছেন বলে মনে পড়ছে না। পর্যটনমন্ত্রী হিসেবে কটা জেলায় ঘুরেছেন, কী কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা সেভাবে সামনেই আসেনি।
এবার গৌতম দেব। উত্তরবঙ্গের বাইরেও যে একটা বাংলা আছে, সে ব্যাপারে তাঁর সম্যক ধারনা আছে বলে মনে হয় না। দুম করে বলে দিলেন, মুকুট মণিপুর থেকে অযোধ্যা রোপওয়ে হবে। এই দুই পর্যটনকেন্দ্রে দূরত্ব কতটা, জানলে এমনটা বলতেন না। দক্ষিণবঙ্গের কী কী পর্যটনকেন্দ্র আছে, তিনি জানেন বলে মনেও হয় না। শিলিগুড়ির মানুষ। কিন্তু একা একা পাহাড়েও তেমন উঠতে দেখা যায় না। মুখ্যমন্ত্রী গেলে সঙ্গে লেজুড় হয়ে তিনি পাহাড়ে ওঠেন।কী করে শিলিগুড়ি পুরসভা দখল করতে হবে, কীভাবে অন্য দল থেকে আসা লোকের হাতে পতাকা গুঁজে দিতে হবে, সারাক্ষণ এই চেষ্টাতেই মগ্ন। এর বাইরে ভাববেন, সেই সময় কোথায়!
গত সাত বছর ধরে শুধু গজলডোবা–গজলডোবা বলেই চিৎকার করে গেলেন। সেখানে নাকি দেশের অন্যতম সেরা পর্যটনকেন্দ্র হতে চলেছে। সাত বছর ধরে এই ‘হতে চলেছে’ নামক কুমিরের ছানাটি বের করেই চলেছেন। কবে হবে, তার কোনও স্পষ্ট উত্তর নেই। এবার আজগুবি এক পরিসংখ্যান দিয়ে বসলেন। সারা বিশ্বের পর্যটনের নিরিখে নাকি আমাদের রাজ্য ছয় নম্বরে। কে এই আজগুবি সমীক্ষা করল, জানতে খুব ইচ্ছে করে। বিশ্বব্যাপী এরকম রাজ্যভিত্তিক সমীক্ষা হয় বলে শুনিনি। ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ কত নম্বরে, একথা বললে তবু না হয় একটা যুক্তি ছিল। কিন্তু থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়া বা আফ্রিকার মতো দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যের কোনও তুলনা হতে পারে! একেক দেশের কাঠামো একেক রকম। অনেক দেশ আছে, যেখানে কোনও রাজ্যই নেই। তাই কীসের মানদন্ডে এই তুলনা, কারা এই সমীক্ষা করল, মাথায় ঢুকছে না। মন্ত্রীমশাইয়ের কাছে অনুরোধ, আগে বাংলাটাকে চিনুন। উত্তরবঙ্গের গন্ডি ছেড়ে একটু বেরোন। পর্যটনের বাস্তব চিত্রটা বুঝুন। ততদিন এই আজগুবি পরিসংখ্যান দেওয়া বন্ধ করুন।