সরল বিশ্বাস
কী ফল হবে মহেশতলায়? যা মনে হচ্ছে, তৃণমূলই জিতবে। জয়ের পর কে কি প্রতিক্রিয়া দেবেন, এখনই আন্দাজ করা যায়।
তৃণমূল: প্রমাণ হল, মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করিয়েও ওরা জিততে পারল না। মানুষ ওদের সঙ্গে নেই। পঞ্চায়েতে হারার পরেও ওদের লজ্জা হয়নি। এবার আরও একবার মোক্ষম জবাব পেল।
বিজেপি: আমরাই কেন্দ্রীয় বাহিনী আনিয়েছিলাম। দেখা গেল, কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলে ওরা কিছুই করতে পারে না। নইলে এক লাখ ভোটে জিতত। প্রমাণ হল, আমরাই দ্বিতীয়।
বাম: কেন্দ্রীয় বাহিনী আই ওয়াশ। আসলে, সব সেটিং। তৃণমূল ইচ্ছে করেই বিজেপি–কে সেকেন্ড করেছে। দুই দলের গট আপ লড়াই ছিল। বাড়িতে বাড়িতে হুমকি দিয়েছিল। টাকা ছড়িয়েছিল। আমাদের ভোটারদের বুথে যেতে দেওয়া হয়নি। এই জয় গণতন্ত্রের জয় নয়। মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছে। আমরা মানুষকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ করব। বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলব।
সেই চিরাচরিত ট্রাডিশন থেকে রাজনৈতিক দলগুলো বেরিয়ে আসতে পারল না। সহজ সত্যিটাকে মুক্ত মনে মেনে নিতেও শিখল না। পঞ্চায়েতে যা হয়েছে, মহেশতলায় মোটেই তা হয়নি। কেন্দ্রীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ভোটই হয়েছে। কোনও পক্ষের তেমন অভিযোগ ছিল না। বুথ বা আশপাশের এলাকায় সন্ত্রাস, ছাপ্পা এসব দেখা যায়নি। তৃণমূল প্রার্থীও যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছেন। জোর জবরদস্তি করে জেতার চেষ্টা করেনি। গুন্ডাবাহিনীকে লেলিয়ে দেননি। বিরোধীদের যথেষ্ট স্পেস দিয়েছেন। ভোটারদের ওপর ভরসা রেখেছেন।
এর জন্য কি দুলাল দাসকে একটা ধন্যবাদ দেওয়া যায় না? চারিদিকে যখন হিংসার আবহ, তখন অনেকটাই ব্যতিক্রমী চেহারা দেখা গেল মহেশতলায়। অনেকে বলবেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল। হ্যাঁ, ছিল। কিন্তু সেটাই একমাত্র কারণ নয়। কেন্দ্রীয় বাহিনী বুথে ছিল। গ্রাম বা পাড়ায় ছিল না। দুলাল দাস চাইলে অন্যরকম টোটকা প্রয়োগ করতেই পারতেন। কেন্দ্রীয় বাহিনী আগেও এসেছে। কিন্তু তাঁদের বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে রাজ্য প্রশাসন কী কী করেছে, তাও দেখেছি। এবারও দুলাল দাস চাইলে ভয়ের আবহ তৈরি করতেই পারতেন। কেন্দ্রীয় বাহিনী কিছুই করতে পারত না। মিডিয়াও একদিন দু একটা ফুটেজ দেখিয়ে থেমে যেত।
এক্ষেত্রে দুলাল দাসকে বা তৃণমূলকে কিছুটা কৃতিত্ব দিতেই হবে। জয়ের মার্জিন নিশ্চিতভাবেই অনেকটা কমবে। যদি দুলাল দাস এক হাজার ভোটেও জেতেন, সে জয়ের মধ্যেও অনেক গর্ব থাকবে। ছাপ্পা মেরে সত্তর হাজারে জেতার থেকে এভাবে এক হাজারে জেতা অনেক বেশি গৌরবের।
এই সহজ সত্যিটা দুলাল দাস বুঝেছেন।
যিনি সবাইকে অনুপ্রেরণা দেন, তিনি যদি বুঝতেন!
এমনকী দুলাল দাস যদি হেরেও যান, তবুও তাঁকে একটা ধন্যবাদ জানানো উচিত। তিনি অন্তত মানুষের ওপর আস্থা রাখার সৎ সাহসটা দেখিয়েছেন।
কিন্তু নিশ্চিত থাকুন, আমাদের বিরোধীরা দুলাল দাসের জয়ের পর সেই বাঁকা বাঁকা মন্তব্যই করবেন। জয়ের জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানালে কী এমন ক্ষতি হয়ে যাবে? ভোটের পর কোনও পক্ষই কিন্তু তেমন হিংসা বা সন্ত্রাসের অভিযোগ করেননি। সিপিএমের দিক থেকে কিছু কিছু বুথে সন্ত্রাসের অভিযোগ আনা হয়েছে। গণশক্তিতে ২৩ টি বুথের কথা বলা হয়েছে। সেখানে অবাধ সন্ত্রাসের কথা বলা হয়নি। এটুকু বিক্ষিপ্ত দখলদারি থাকবে। ওই ২৩ বুথ বাদ দিলে বাকিগুলোর ফল মেনে নিতে আপত্তি কীসের? কিন্তু এরপরেও বলা হবে, টাকা ছড়ানো হয়েছে, চোরা সন্ত্রাস ছিল, মিথ্যে মামলার ভয় দেখানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনীকেও ম্যানেজ করে নিয়েছে।
এইসব কথাগুলো না বললেই নয়? বিক্ষিপ্তভাবে যদি কোথাও কিছু হয়ে থাকে, এই আবহে সেটুকু মেনে নিতেই হবে। শাসক দল সব জায়গায় দারুণ শান্ত থাকবে, এমন আশা যাঁরা করেন, তাঁরা রাজনীতি না করে বেলুড় মঠে যান। প্লিজ, ওই বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে অহেতুক বড় করে দেখাবেন না। সেটা অজুহাতের মতোই শোনাবে।
এই আকালেও মহেশতলা একটা ভিন্ন ছবি দেখাল। এখান থেকে সবাই কিছু কিছু শিক্ষা নিন। শাসকেরা জনগণের রায় নেওয়া হওয়ার সৎ সাহস দেখান। বিরোধীরাও মুক্তকণ্ঠে রায়কে মেনে নিন। এমনকী সেই রায় যদি বিপক্ষে যায়, তবুও। শান্তির পরীক্ষায় মহেশতলায় খুব ভাল রেজাল্ট না করলেও পাস মার্ক পেয়েছে, বলাই যায়। দলগুলি কতটা শেখে, সেটাই দেখার।