অনুপ্রেরণা কত ভয়ঙ্কর, বুঝল আই এফ এ

অজয় কুমার

বোঝা গেল, আই এফ এ অফিসের বাইরেও উন্নয়ন তাহলে দাঁড়িয়ে থাকে। বোঝা গেল, সুতারকিন স্ট্রিটের এই অফিসটাও থরহরি কম্পমান। যতই অটোনোমাস বডি বলা হোক, আসলে এটাও সেই কালীঘাটের ইচ্ছেতেই চলে।

এতবছরের ফুটবল প্রশাসক সুব্রত দত্ত। দীর্ঘদিন ছিলেন আই এফ এ সেক্রেটারি। এখন আই এফ এ সভাপতি। তার ওপর অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনিও যে কতটা অসহায়, আরও একবার বোঝা গেল।

মুখ্যমন্ত্রীর দাদার ইচ্ছে হয়েছিল, তিনি আই এফ এ সভাপতি হবেন। এসব লোকের স্তাবকের অভাব হয় না। নিশ্চিতভাবে তাঁদের কেউ কেউ উস্কে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, দাদা দাঁড়িয়ে যান, সঙ্গে আছি। আপনি এলে ফুটবলের দারুণ উন্নতি হয়ে যাবে।

subrata dutta

যাঁরা স্তাবকদের নিয়ে ঘোরেন, তাঁরা স্তাবকদের এইসব বাক্য বিশ্বাসও করেন। অজিত ব্যানার্জির ধারনা হয়ে গেল, তিনি বোধ হয় খেলাটা দারুণ বোঝেন। তিনি সভাপতি হয়ে গেলে আই এফ এ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসবে। অতএব, তিনি ইচ্ছের কথা জানিয়ে দিলেন। এমনকী সুব্রত দত্তর বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়াতে চান, এই হুঙ্কারও দিয়ে রাখলেন। তাঁর দাবি, সুব্রত দত্ত বাংলার ফুটবলের কোনও উন্নতি করতে পারেননি।

সুব্রত দত্ত কি সত্যিই ভয় পেয়ে গেলেন?‌ এত বছর ধরে যাঁদের নিয়ে আই এফ এ চালিয়েছেন, তাঁদের ওপর আর বিশ্বাস নেই?‌ ভোট হলে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর দাদার দিকে চলে যেতে পারেন, এমন আশঙ্কাও নিশ্চয় কাজ করছিল। মুখ্যমন্ত্রীর দাদা দাঁড়িয়ে পড়া মানে, তাঁকে জেতানো ক্রীড়ামন্ত্রী ও রাজ্য প্রশাসনের বড় দায়িত্ব হয়ে দাঁড়াবে, এটা নিশ্চয় আগাম বুঝতে পেরেছিলেন। তাঁর ওপর, তাঁর ব্যবসার ওর কী কী প্রভাব নেমে আসতে পারে, তাও হয়ত আন্দাজ করেছিলেন। অতএব, সম্মানরক্ষার পথ তাঁকেই খুঁজতে হবে।

ajit4

এতদিন ধরে জর্জ টেলিগ্রাফের মতো সংস্থা চালাচ্ছেন। আই এফ এ চালাচ্ছেন। ফেডারেশনেও প্রভাবশালী। একটা উপায় ঠিক বের করলেন। অজিত ব্যানার্জিকে সভাপতি করে নিজের জন্য চেয়ারম্যান পদ তৈরি করলেন। নিজের প্রভাবও রইল। আবার মুখ্যমন্ত্রীর দাদার ইচ্ছেপূরণও হল। কিন্তু তার জন্য যে সংবিধান বদল করতে হবে। গভর্নিং বডির অনুমোদন নিতে হবে। তা নিয়ে বিশেষ চিন্তা নেই। এক, তিনি চাইছেন। দুই, মুখ্যমন্ত্রীর দাদার জন্য সংবিধান বদল। তিনি নিশ্চিত, গভর্নিং বডিতে কেউ আপত্তি তুলবে না। কোনও বিরোধীতা আসবে না।

বুঝে দেখুন, আই এফ এ কেমন চলছে। বুঝে দেখুন, কারা গভর্নিং বডির সদস্য। একজনের খেয়াল হল, সভাপতি হবেন। অমনি সেই খেয়াল পূরণের ব্যবস্থা হয়ে গেল। সংবিধান সংশোধনও হয়ে যাবে।

সত্যিই, অনুপ্রেরণা বড় ভয়ঙ্কর জিনিস।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.