ভাগ্যিস ভোটের ডিউটিতে যেতে হয়নি

(‌বেঙ্গল টাইমসের বিশেষ ফিচার। ভোটকর্মীর ডায়েরি। যাঁরা ভোটের ডিউটিতে গিয়েছিলেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা। বা যাঁদের যেতে হয়নি, তাঁদের অনুভূতি। আগামী ১০ দিন এই সিরিজ চলবে। রোজ একটি বা দুটি লেখা ছাপা হবে। আজ প্রথম কিস্তি।।)

ভাস্কর রায়

না, আমাকে এবার ভোটের ডিউটিতে যেতে হয়নি। তার জন্য শাসকদলকে একটা ধন্যবাদ জানাতেই হবে।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়। এবার এই সংখ্যাটা এতটাই বেশি, যে ৩৪ শতাংশ আসনে কোনও ভোট হয়নি। ফলে, স্বাভাবিক নিয়মেই এক তৃতীয়াংশ মানুষকে ভোটের ডিউটিতে যেতে হয়নি। আমি সেই সৌভাগ্যবানদের দলে। তাই, এই লাগামছাড়া সন্ত্রাসে আমার অন্তত পরোক্ষ লাভ হয়েছে।

কিন্তু তার আগে ট্রেনিং নিতে হয়েছিল। সেখানে যা অভিজ্ঞতা হয়েছিল, ভোটের ডিউটিতে গেলে কী হবে, ভেবে শিউরে উঠেছিলাম। কোনও রাখঢাক না রেখেই বলা হল, শাসকদল যা চাইবে, সেটাই যেন মেনে নেওয়া হয়। অযথা ঝামেলায় যাওয়ার দরকার নেই। যা হয়েছে, তেমন রিপোর্ট দিতে গেলে চাকরি নিয়ে সমস্যা হতে পারে। তার থেকে প্রশাসন যেমন রিপোর্ট চাইবে, তেমন রিপোর্ট দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

polling staff

ভোটের ডিউটিতে আগেও গিয়েছি। সেখানে অন্তত মুখে বলা হয়েছে নির্ভয়ে কাজ করুন। কোনও কিছু ঘটলে আগে প্রশাসনকে জানান। প্রশাসন আপনার সঙ্গে থাকবে।

এসব শুনে কিছুটা হলেও আশ্বাস পেতাম। বাড়িতে বলতাম। তারাও কিছুটা আশ্বস্ত হত।

কিন্তু এবার যেন চক্ষুলজ্জাটাও ছিল না। ঠারোঠোরে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল, বেশি সাহস দেখাতে গেলে ভুগতে হবে। কেউ তোমার দায়িত্ব নেবে না। কর্তারা যেমনটা চাইছেন, তেমনটাই করবে।

আমি যে পোস্টে চাকরি করি, তাতে আমাকে অন্তত প্রিসাইডিং অফিসার হতে হয় না। মূলত সেকেন্ড পোলিং স্টাফ হিসেবে কাজ করেছি। তাই বুথে যা ঘটছে, সরাসরি আমার কোনও দায় নেই। কিন্তু আমিও তো সেই প্রক্রিয়ার একটা অংশ।

জানি না, ভোটে গেলে কী অভিজ্ঞতা হত। মানিয়ে চলতে চলতে আমরা সবকিছুই মেনে নিচ্ছি। পাড়ায়, চায়ের দোকানেও এসব বলতে পারি না। বাড়িতেও নিজেদের অসহায়তার কথা বলতে পারি না।

(‌লেখকের অনুরোধে তাঁর আসল নাম ব্যবহার করা হয়নি। কোন এলাকার, সেটাও সচেতনভাবেই উল্লেখ করা হল না।)

 

 

(‌ভোটকর্মীর ডায়েরি। আগামী দশদিন এই ফিচার চলবে। রোজ একটি বা দুটি লেখা প্রকাশিত হবে। তেমন সাড়া পেলে, আরও বেশি লেখাও থাকতে পারে। আপনিও আপনার অভিজ্ঞতা লিখে পাঠাতে পারেন। শুধু সিরিয়াস কথাই লিখতে হবে, এমন নয়। নানা মজার ঘটনাও তুলে ধরতে পারেন। খোলা মনে নিজের অনুভূতির কথা লিখুন। আপনি চাইলে আপনার পরিচয় গোপন রাখা হবে।)‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.