সন্দীপ লায়েক
————————-
ইংরেজীতে একটা প্রবাদ আছে Prevention is better than cure. বিশুদ্ধ বাংলায় যার মানে দাঁড়ায় -রোগের আগেই প্রতিরোধ। গোদা বাংলায় বললে, সাপ বেরোনোর আগেই পিটিয়ে মারা।
ডাক্তারবাবুরা সুযোগ পেলে এই উপদেশটা ব্যবহার করতে ছাড়েন না। হয়তো সিগারেটে একটা টান মেরে বলবেন –ধূমপানটা ছেড়ে দিন। কিম্বা সকাল থেকে খলিপেটে থেকে বলবেন– জানেন কি, অ্যাসিডিটিতে যত লোক মরে, তার সিকি ভাগ লোকও ক্যান্সারে মরে না। তাই খলিপেটে একদম থাকবেন না।
রাশভারী প্রবাদটায় মজা থাকলেও থাকতে পারে। তবে মেনে চলা দুরহ। অথচ এই কঠিন কথাটা কি অসামান্য দৃঢ়তায় আমাদের বিশ্ববাংলা সরকার মেনে চলল। যা ভেবে গর্ব বোধ হয়নি, এমন কথা বলার মতো বুকের পাটা এই সহিষ্ণু বঙ্গদেশে কারুর নেই।
এই পঞ্চায়েত ইলেকশনের কথাই ধরুন। আগে যে সমস্ত সরকার ছিল তারা কত জঘন্য কর্মকলাপ করত জানেন? আচ্ছা ঠিক আছে, কি না করতো সেটাই বলুন? বুথে হামলা, ব্যালট ছিনতাই, ছাপ্পাভোট, বাড়িতে বাড়িতে শাসানো, লুঠপাঠ ..ছি ছি ..কিস্যু বাদ দিতো না। মানুষের মনের মধ্যে গুঁজে দিতো হিংসার বীজ।
অথচ দেখুন পরিবর্তনের সরকারকে। মানুষের মধ্যে হিংসা হানাহানি যাতে না হয় তার জন্য কি কর্মকান্ডই না করছেন। আরে ভাই, শুধু বিরোধীরা মনোনয়ন দিতে না পারলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়! তারপর বুথে হামলা, ব্যালট ছিনতাই, বাড়িতে বাড়িতে শাসানোর আর কি কোন মানে দাঁড়ায় কি? মানুষে মানুষে বিদ্বেষের কোনো ভ্যালু থাকে কি?
এতো সিম্পল একটা ফান্ডা। অথচ কারুর মাথাতেই গজালো না এতদিন? যেই ব্যবহার হল অমনি সবাই ফোঁস করে উঠল। আসলে নির্মম সত্য মানতে গেলে লোকের ইয়েতে লাগে। মন্দ কথা বলে। অনুপ্রেরণার কথা তোলে।
ও হো..বুঝেছি। ওই যে রাজ্য জুড়ে বেশ কয়েক মালকে টাইট দেয়া হল, ছুরি মারা হল, গোটা কয়েক মহিলার চুলের মুঠি ধরে পেটানো হল এসব নিয়ে ভাবছেন! আরে বাবা ওসব কিছু না। গনতন্ত্রে ওসব হয়ই। ভালো কিছু পেতে গেলে কিছু হারাতেই হয়।
আচ্ছা এক কাজ করুন। বুকের ওপর শার্টে হাত রাখুন তারপর নিজেকে শুধান তো -আপনি কি উন্নয়নের জোয়ারে ভাসেননি?
হ্যা হ্যা হ্যা..জানি। এতক্ষনে আপনি আপনার উত্তর পেয়ে গেছেন.. ভেসে গেছেন। তাহলে বলুন, বিরোধীরা কি ভিনগ্রহ থেকে আসবে মনোনয়ন জমা দিতে?
তারপরও যারা অল্পসল্প বিক্ষুব্ধ ভাসতে না পেরে গুইগাঁই করেছেন তাদের জন্যও সু বন্দোবস্ত ছিল ও আছে- ক্লাবের দার্শনিক লেঠেল সম্প্রদায় ও বোমা-পিস্তল বাহিনী। না পারলে সব শেষে পোষা সারমেয়দের দল। তারা আপনাকে গোল করে ঘিরে গণতন্ত্রের সবক শেখাবে।
আজ আমি বলছি আপনি শুনুন। এই যে গিভ অ্যান্ড টেক পলিশি। এটাও চিরন্তন সত্য। তাই সাধেকি ক্লাবের ছেলে-বুড়ো গুলোকে বছরে দু লাখ টাকা, সঙ্গে ফ্রিতে হকিস্টিক আর বোমা দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করি? আরে ভাই এজন্যই, যাতে গণতন্ত্রটা বজায় থাকে।
ছি ছি একপেশে মিডিয়া! এত্তগুলো মানুষের কর্মসংস্থান তারপরেও কোন মুখে বলে আশি লক্ষ কর্মসংস্থান নাকি হয়নি? হুঁকোমুখোরা বলে বিশ্ব বাংলায় গণতন্ত্র নাকি বিপন্ন?
ভালয় ভালয় বলছি শুনে রাখুন।..ওনার ওপর বিশ্বাস রাখুন। জেনে রাখুন সবার ওপরে উনিই সত্য তাহার সারথী কেস্টা..