ভজন দত্ত
দুপুরবেলায় হঠাৎ ব্রেকিং নিউজ। বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় নাকি বিস্ফোরক ফেসবুক পোস্ট করেছেন। তাতে কী লেখা? এই নোঙরা রাজনীতিতে আমি আর নেই। এখানে আমি বেমানান।
যথারীতি বেশ কয়েকঘণ্টা ধরে এটাকে নিয়ে ক্রিয়া–প্রতিক্রিয়া চলল। মনে হল, বৈশ্বানরবাবু বিরাট বড় মাপের এক নেতা। তিনি রাজনীতির ময়দান থেকে চলে গেলে বোধ হয় এই বঙ্গ রাজনীতিতে বিরাট এক শূন্যতা নেমে আসবে।
আসলে, বাংলার মূলস্রোত সাংবাদিকতা বরাবরই কলকাতা কেন্দ্রিক। তাই কলকাতার পাড়ার নেতারাও মিডিয়ার কাছে বিরাট নেতা। তেমনই এক নেতা বৈশ্বানরবাবু। তাঁর নামটা শুনে আসছি বহুদিন ধরেই। কলকাতায় থাকার একটা সুবিধে আছে, কয়েকজন মিডিয়ার দাদা ধরে দিব্যি প্রচারে ভেসে থাকা যায়। কয়েক বছর আগেও তিনি ছিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি। পনেরো বছর আগেও ছাত্রনেতা, পনেরো বছর পরেও ছাত্রনেতা। যে লোকটা পঞ্চাশের বেশি বয়সেও ছাত্রনেতা, তিনি আসলে কেমন নেতা, এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায়। তাঁর আরও দুটো পরিচয় আছে। কাউন্সিলর ও আইনজীবী।
তাঁর গোঁসা হয়েছে, কেন তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠানো হল না। যেন বিরাট যোগ্য এক প্রার্থীকে বঞ্চিত করা হল। দোষটা বৈশ্বানরের নয়। আসলে, রাজ্যসভায় এত ভুলভাল লোককে দেখছেন, তাঁর মনে হতেই পারে, এদের থেকে আমি কম কীসে? আসলে, রাজ্যসভার গুরুত্বটা নেত্রী বোঝেন বলে মনে হয় না। বুঝলে এভাবে যাকে তাকে রাজ্যসভায় পাঠিয়ে দিতে পারতেন না। কাদের কী শর্তে পাঠানো হয়েছে, তা বুঝতে বিরাট কোনও গোয়েন্দা হওয়ার দরকার পড়ে না। এই মুহূর্তে সুখেন্দু শেখর রায়, মণীশ গুপ্ত, কিছুটা ডেরেক ও ব্রায়েন। এ ছাড়া আর কাউকে দেখে মনে হয় এঁরা রাজ্যভায় যাওয়ার যোগ্য? টিভিতে বৈশ্বানরবাবু বেশ কিছু টক শো দেখেছি। যুক্তি কম, চিৎকার বেশি। এবং এতই আবোল–তাবোল যুক্তি বিন্যাস, পাহাড়র চায়ের দোকানে তার থেকে ঢের ভাল তার্কিক খুঁজে পাওয়া যায়। এই যুক্তি শুনে বোঝা যায়, তিনি কেমন আইনজীবী।
এই সব লোকেরাও কী অবলীলায় রাজ্যসভায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারেন। স্বপ্নপূরণ না হলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারেন! রাজ্যসভায় যেতে গেলে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর যেমন দখল চাই, তেমনি ইংরাজিতেও দখল চাই। এ দুটোর কোনওটাই বৈশ্বানরবাবুর আছে বলে মনে হয় না। তৃণমূল যে চারটে নাম ঘোষণা করেছে, তাঁদেরও আছে বলে মনে হয় না (শান্তনু সেনের কিছুটা থাকলেও থাকতে পারে)। রাজ্যসভাও হয়ে উঠেছে দলীয় আনুগত্যের পুরস্কার। তাই নেত্রী অনায়াসেই ভেবে নিতে পারেন অনুব্রত মণ্ডলের নাম। বৈশ্বানরবাবুর ক্ষুব্ধ হওয়া এটাই বুঝিয়ে দেয় যে, রাজ্যসভায় মনোনয়নের মানটা এই জায়গাতেই নেমে গেছে। যেখানে দাঁড়িয়ে বৈশ্বানরবাবুরাও রাজ্যসভায় যাওয়ার কথা ভাবতে পারেন।