জগবন্ধু চ্যাটার্জি
একটা বইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হতে পারে আরেকটা বই লিখে। কিন্তু একটা মূর্তি ভাঙার ক্ষেত্রে আরেকটা মূর্তি ভাঙা কখনই কাম্য নয়। কিন্তু এই সহজ সত্যিটা আমরা মাঝে মাঝে ভুলে যাই।
ত্রিপুরায় লেনিনের মূর্তি ভাঙা হল। চরম নিন্দনীয় ঘটনা। যে কোনও শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষই এই ঘটনাকে ধিক্কার জানাবেন। কিছু বিকৃত মনষ্ক মানুষ ছাড়া সবাই ধিক্কার জানাচ্ছেনও। কিন্তু তার পাল্টা এই বাংলায় কী হল? কেউ কেউ অতি উৎসাহে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির মূর্তিতে কালি লাগিয়ে দিল। দ্বিধাহীনভাবে বলতে চাই, এটা কোনও প্রতিবাদের পন্থা নয়। লেনিনের মূর্তি ভাঙা যেমন জনঘ্য অপরাধ, শ্যামাপ্রসাদের মূর্তিতে কালি লাগানোও একইরকমের নিন্দনীয়। ওটা হয়েছিল বলেই এটা করতে হবে, এটা কোনও সুস্থ মানুষের যুক্তি হতে পারে না। লেনিনের মূর্তি ভাঙার কারণে যদি ত্রিপুরা কলঙ্কিত হয়ে থাকে, তবে একই কারণে বাংলার সম্মানও কিছুটা নষ্ট হল শ্যামাপ্রসাদের মূর্তিতে কালি লাগানোর ঘটনায়।
আমি ইতিহাস বিশারদ নই। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে আর দশজন বাঙালি যা জানেন, আমিও তাই জানি। তাঁকে বাংলার জন্মদাতাও মনে করি না। আবার তিনি ঘৃণ্য মানুষ, এমনটাও মনে করি না। এত বছর পর সেইসব দিক টেনে আনার কোনও মানেও হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। সেই কারণে এই শহরে তাঁর নামে একটা মূর্তি থাকতেই পারে। সেই মূর্তি কখনও আক্রমণের শিকার হতে পারে না।
কিন্তু আমরা সবাই কি এই কাজকে ধিক্কার জানাতে পারছি? অনেকের ফেসবুক পোস্ট পড়লে মনে হচ্ছে, ওখানে হয়েছে, এখানে হলে ক্ষতি কী? যাঁরা শ্যামাপ্রসাদের মূর্তি ভাঙাকে সমর্থন করছেন, তাঁদের কোনও অধিকার নেই লেনিনের মূর্তি ভাঙাকে ধিক্কার জানানোর। ঠিক তেমনি, লেনিনের মূর্তি ভাঙাকে যাঁরা সমর্থন করেছিলেন, তাঁদেরও নৈতিক অধিকার নেই শ্যামাপ্রসাদের মূর্তি ভাঙার বিরোধীতা করার। যারা শ্যামাপ্রসাদের মূর্তি ভাঙল, তারা আসলে লেলিনের মূর্তি ভাঙা লোকেদের হাতকেই শক্ত করল।
লেনিনের মূর্তি ভাঙা আর শ্যামাপ্রসাদের মূর্তি ভাঙা–এই দুটো একইধরনের মানসিকতার প্রতিফলন। বিতর্কটা লেনিন বনাম শ্যামাপ্রসাদের নয়। বিতর্কটা বিজেপি বনাম সিপিএমেরও নয়। বিতর্কটা ভাঙার ও গড়ার। আপনি ভাঙা সমর্থন করেন নাকি যারা ভাঙছে তাদের ধিক্কার দিতে চান? আপনার অবস্থান আপনাকেই বেছে নিতে হবে।
(এটি ওপেন ফোরামের লেখা। মতামত লেখকের নিজস্ব। এই বিষয়ে সুস্থ বিতর্ক হতেই পারে। আপনিও আপনার মতামত তুলে ধরতে পারেন।)