অরিজিৎ সেন
কোন পথে চলেছেন অনুপম হাজরা? এখনই সেই পথটা দেখা যাচ্ছে। সামনের লোকসভায় বোলপুর থেকেই তিনি যদি বিজেপি–র প্রার্থী হন, অবাক হওয়ার কিছু নেই। জল সেদিকেই গড়াচ্ছে।
হঠাৎ এই সাংসদ নেতাজিপ্রেমী হয়ে গেলেন, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। নেতাজি সম্পর্কে আর দশজন যা জানে, তিনিও বোধ হয় সেটুকুই জানেন। চায়ের দোকানে যেসব গুলতানি হয়, তাঁর বিদ্যেও ততটুকুই। কিন্তু একটা সহজ সত্যি জেনে ফেলেছেন, বিজেপির নজরে আসতে গেলে তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে হবে। সাংগঠনিকভাবে পাল্টা সভা করার মতো জনবল নেই। তিনি সভা ডাকলে পাঁচশো লোকও জোটানো মুশকিল। ফেসবুক তো আছে! এখানে উল্টোপাল্টা কিছু লিখলেই দিব্যি খবর হওয়া যায়। আর বিজেপি–র সুনজরে আসতে গেলে একটাই পন্থা গান্ধীজির নামে গালাগাল দাও।
ঠিক এই কাজটাই করেছেন বোলপুরের সাংসদ। যা করেছেন, অঙ্ক কষেই। ফল যা হওয়ার, তাই হচ্ছে। দল থেকে প্রথমে শোকজ (যদিও সেই চিঠি আদৌ পাবেন কিনা সন্দেহ)। এরপর হয়ত সাসপেন্ড করা হবে। এমনিতেই তৃণমূলের টিকিট আর পেতেন না। দেওয়াল লিখন পরিষ্কার ছিল। যাওয়ার আর জায়গা কোথায়? বর্তমান সাংসদ বলে কথা, বিজেপি ঠিক লুফে নেবে। হয়ত প্রার্থীও করে দেবে।
আচ্ছা, এই অনুপম হাজরাকে কখনই সাংসদ বলে মনে হয়? এই আসন থেকেইএকসময় জিততেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতো মানুষ। সেই আসনে কিনা অনুপম হাজরা? পোশাক থেকে চালচলন, কথাবার্তা থেকে আচরণ–কোথাও সাংসদ হওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতা চোখে পড়ে! সেদিন একটি ছবি চোখে পড়ল, মুনমুন সেনের সঙ্গে শ্রীমান অনুপম হাজরার। দুজনেই এখন তৃণমূলের সৌজন্যে লোকসভার সদস্য। ছবিটি থেকেই দুজনের রুচি পরিষ্কার। ভাবতে অবাক লাগে, এরা আমাদের রাজ্য থেকে লোকসভার সদস্য! যেমন অনুপম, তেমনই মুনমুন। কিন্তু এই সব লোককে লোকসভায় টিকিট দেওয়া হয়েছে। গত চার বছরে ইতিবাচক কী এমন কাজ করেছেন। সংসদে কোনও ছাপ ফেলতে পারেননি। এলাকায় সময় দেন না। দিলেও উন্নয়নমূলক কাজ সম্পর্কে কোনও ধারনাই নেই। অপকর্মের যেটুকু সুযোগ পেয়েছেন, করেছেন। এই অনুপমকে তৃণমূল এখন ঘাড় থেকে নামাতে পারলে বাঁচে। আর বিজেপি এইসব লোককেই জামাই আদর করে বরণ করবে। হ্যাঁ, এটাই বাংলার রাজনীতির ভবিতব্য।
(ওপেন ফোরাম। মতামতের দায় লেখকের। আপনিও নানা বিষয় নিয়ে ওপেন ফোরামে লেখা পাঠাতে পারেন। নিজের মতামত তুলে ধরতে পারেন। )