একদিকে বৌঠান কাদম্বরী, অন্যদিকে স্ত্রী মৃণালিনী। দ্বিধা–দ্বন্দ্বের চোরাস্রোতে রবি ঠাকুর। লোকমুখে কত গল্প ছড়িয়ে যায়। সিনেমার পর্দায় এবার তেমনই টানাপোড়েনের কাহিনি। তুলে ধরলেন সংহিতা বারুই।
কজন বাঙালি জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি গেছেন? পুরুলিয়া বা কোচবিহার ছেড়ে দিন। যাঁরা কলকাতায় বেড়ে উঠেছেন, তাঁদের মধ্যে কজন? ঠাকুরবাড়ি বলতে জীবনস্মৃতি বা ছেলেবেলায় তেমন আগ্রহ কই? বাঙালির কৌতূহল রবি ঠাকুরের বৌদি পর্যন্ত গিয়েই আটকে যায়। ‘বৌদির সঙ্গে নিশ্চয় কিছু একটা ছিল...।’
কিন্তু সেই বৌদির নাম কী? দাদার নামটাই বা কী? কোন বইয়ে এসব কথা জানা যায়? উত্তর নেই। পড়ার আগ্রহও নেই। ফিসফিসটাই ভাইরাল হয়ে যায়।
একটি মানুষের জীবনে প্রেম বারেবারে কীভাবে ধরা দিয়েছে? কত ঘাত–প্রতিঘাত, দ্বিধা–দ্বন্দ্বের সাগর পাড়ি দিতে হয়েছে। একদিকে সুপ্ত চাওয়া, অন্যদিকে সমাজ–লোকলজ্জার ভ্রুকুটি। কাদম্বরীর জীবনে কীভাবে খোলা জানালা হয়ে উঠলেন কিশোর রবি? বিয়ের আগে কী কী দ্বিধা কাজ করেছিল রবির মনে? একদিকে মৃণালিনী অন্যদিকে বৌঠান কাদম্বরী— দুই সত্ত্বার মাঝে কবির দোটানা। মৃণালিনীর আগমনকে কাদম্বরী কী চোখে দেখতেন? কাদম্বরীকে ঘিরে মৃণালিনীর কি কোনও লুকোনো যন্ত্রণা ছিল? যখন কাদম্বরী চিরতরে হারিয়ে গেলেন, তখন কী ঝড় বয়ে গিয়েছিল কবির ওপর দিয়ে? তারপর কীভাবে ইন্দিরার প্রবেশ? রবিকে ঘিরে তাঁর দাবিই বা কতখানি? এমন অনেক অজানা দিক উঠে আসবে একটি ছবিতে। ছবির নাম: রবির প্রেম।
পঁচিশে বৈশাখের আগে এ এক অন্যরকম শ্রদ্ধাঞ্জলি। বাঙালির জীবনে ভেসে থাকা নানা প্রশ্ন আর তার উত্তর উঠে আসবে পর্দায়। সেভাবেই চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন পার্থ মিত্র। তিনিই ছবির পরিচালক। প্রযোজনায় এগিয়ে এসেছেন এস আর গুইনস ফিল্মের সোমনাথ গুইন। ডিওপি উজ্জ্বল ভট্টাচার্য, শিল্প নির্দেশনা শতদল মিত্র। সঙ্গীত আয়োজনে সৌমিত্র কুণ্ডু, নেপথ্য কণ্ঠে দেবারতি দাশগুপ্ত সরকার। প্রচার ও জনসংযোগে নিগমানন্দ ঠাকুর। অভিনয়ে আছেন দেবেশ রায়চৌধুরি, বাণী কুমার, প্রিয়াংশী, সুমন, পায়েল রায়, শ্রীপর্ণা পোদ্দার, প্রাতশ্রী, সুস্মিতা পাল, সুস্মিতা চক্রবর্তী, অনন্যা চক্রবর্তী, লিপিকা উপাধ্যায়, দেবযানি বর্মণ, সোমা গাজী, মানব রায়, প্রীয়ম, মুমতাজ সরকার।
আউটডোর শুটিংয়ের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে হাতিবাগান রায়বাড়ি ও গড়িয়ার বাগানবাড়িকে। জোরদকমে চলছে কাজ। পঁচিশে বৈশাখের আগেই ছবিটি মুক্তি পাবে। পুজোয় হাফডজন ছবি হয়। বড়দিনেও হাফডজন। নানা উপলক্ষে ছবির মিছিল। রবি ঠাকুরের জন্মদিনে একটা ভিন্নধর্মী ছবি মন্দ লাগবে না। বিষয় ভাবনায় বৈচিত্র্য তো আছেই। তবে চমক নয়, আড়ালে রয়ে গেছে গবেষণাও। একটা ছবি যদি রবি ঠাকুরের জীবনের অন্য একটা দিক তুলে ধরে, মন্দ কী? অন্তত ছবির হাত ধরে বাঙালি পৌঁছে যেতে পারে ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলে।