ইচ্ছেমতো নামবদল যেন একটা ট্রাডিশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই পথেই হেঁটেছিলেন মোদি। এবার তাঁর প্রকল্প বদলে দিলেন মমতা। সস্তা হাততালির মোহ থেকে বেরিয়ে আসা সত্যিই বড় কঠিন। লিখেছেন প্রসূন মিত্র।।
প্রকল্পের নাম বদলে দেওয়া যেন রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে যার ইচ্ছেমতো নাম বদলে দিচ্ছে। সরকার একটা চলমান পরম্পরা। আগের সরকারের কাজ পরের সরকারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। এটাই সংসদীয় শিষ্টাচার। কিন্তু যাঁরা সরকার চালান, তাঁরা বোধ হয় এই সাধারণ শিষ্টাচারগুলো ভুলে যান। তাই নম ক্রমশ বদলে যায়।
আগের সরকারের সব খারাপ প্রথাকে বয়ে বেড়াতে হবে, এমন নয়। সেক্ষেত্রে শুধরে নেওয়ার সদিচ্ছা লাগে। গৃহহীনদের বাড়ি নির্মাণের এই প্রকল্প ইন্দিরা আবাস যোজনা নামে বহুকাল ধরেই পরিচিত। ইন্দিরা গান্ধী দীর্ঘদিন ধরে দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর নামে একটা প্রকল্প থাকতেই পারে। মোদি সরকার এসেই নাম বদলে দিলেন। সেটা হয়ে গেল প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা। এমন নয় যে এই সরকার নিজেদের নামে কিছু করেনি। অটল পেনশন যোজনা থেকে শুরু করে মোঘল সরাইকে দীনদয়াল উপাধ্যায়ের নামে করা, এমন নানা কীর্তি ছড়িয়ে আছে।
একটা প্রকল্প যদি প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীর নামে থাকত, কী এমন ক্ষতি হয়ে যেত? কিন্তু সেটার নাম বদলে ফেলা হল। প্রধানমন্ত্রীকে যে সস্তা হাততালি নিতেই হবে। আর সেই পথেই হাঁটল আমাদের তৃণমূল সরকার। তারাও কেন্দ্রীয় প্রকল্পকে বেমালুম নিজেদের প্রকল্প বলে চালিয়ে দিল। নাম দিয়ে দিল— বাংলার আবাস। মোদি নিজে নাম বদলেছেন। এবার তাঁর দেওয়া নাম বদলে দিলেন মমতা। এরকমই চলতে থাকবে। কারণ, কেউই সস্তা হাততালি আর সস্তা কৃতিত্ব নেওয়ার লোভ ছাড়তে পারেন না।
যে পাঁচ লাখ লোককে বাড়ি দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তাঁদের নাম নিয়ে নানা স্বজনপোষণ থাকবে, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু মুশকিলটা হল বছর দুই আগে এঁদেরই অধিকাংশের নামে বাড়ি বরাদ্দ হয়েছিল। সেগুলোর কী হল? সেই নামগুলোই নতুন প্রকল্পে চলে এল কীভাবে? তাহলে দু বছর আগের ঘোষণার কী হল? প্রশ্নগুলো সহজ। উত্তর নেই। থাকবেও না। পঞ্চায়েতের আগে এত মানুষকে পাইয়ে দেওয়ার সুযোগ, কে ছাড়ে! সস্তা রাজনীতির এই ট্রাডিশন চলতেই থাকবে।