জিন্দাল সজ্জন, আর আমি বুঝি দুর্জন!‌

রবি কর
আমার বউ প্রবল বাংলা বিরোধী। বাংলা মদ, বাংলা ভাষা, বাংলা রাজ্য–‌কোনও কিছুকেই সে দুচোখে দেখতে পারে না। আমি বেঙ্গল টাইমসে কাজ করি। বেঙ্গল মানে বাংলা, তাই আমাকেও দেখতে পারে না। এমনকি বিশ্ব বাংলাও তার চোখের বিষ। এই যে এতবড় শিল্প সম্মেলন হল, সবাই বলল, ওয়েস্ট বেঙ্গল এখন বেস্ট বেঙ্গল, কুচক্কুরে বউ সে কথা কিছুতেই মানতে রাজি নয়। বলে, ‘‌আসলে west bengal‌ এখন waste bengal ‌হয়ে গেছে। আমি অত ইংরাজি বুঝি না। বউকে জিজ্ঞেস করলাম, দুটো শব্দের পার্থক্য কী গো?‌ বউ বলল, ডিকশেনারি খুলে দেখে নাও। এ তো বাংলার মতো মৃত ভাষা নয়, ইংরাজি অনেক জীবন্ত ভাষা।
বাংলা মৃত ভাষা?‌ যে ভাষায় সাহিত্য সাধনা করে মমতা ব্যানার্জি ডিলিট পেলেন, যে ভাষায় অভিষেক নিজের পিসিকে দিদি বলে ডাকে, তা মৃত ভাষা?‌ বলে দিলাম, বাংলা ইংরাজির থেকে অনেক জীবন্ত। উদাহরণ দিয়ে বললাম, ব্যাঙাচি একটি জীবন্ত প্রাণী। তার লেজ খসে পূর্ণাঙ্গ ব্যাঙ হয়ে ওঠে। বাংলা ভাষাও তেমন। এই যে দিদি বললেন, এবারের শিল্প সম্মেলন টপ অফ দ্য টপ, কিছুদিন পরেই দেখবেন, ট এর লেজ খসে পূর্ণাঙ্গ ঢ হয়ে যাবে। তখন টপটাই হয়ে যাবে ঢপ। তখন বুঝবে বাংলা কেমন জীবন্ত ভাষা।

business

কিন্তু এত যুক্তি দেখিয়েও বউয়ের মন পাওয়া গেল না। বালিস–‌কাঁথা নিয়ে পাশের ঘরে শুতে চলে গেল। বিয়ের একমাস পর থেকেই এই কাণ্ড চলছে। বউ আলাদা ঘরে শোয়। বলে, আমি নাকি অক্ষম। বলে, যারা বিয়ের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস করে, তাদের তবু ক্ষমা করা যায়। কিন্তু আমি নাকি সহবাসের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিয়ে করেছি। আমি ক্ষমার অযোগ্য।
আচ্ছা, আপনারাই বলুন, সহবাসের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিয়ে করেছি, তারপর সহবাস করিনি, এটা কী এমন অপরাধ?‌ আরে বাপু, আমার বউয়ের জীবনে আমি তো মাত্র একজনই পতি, যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, কিন্তু আসল কাজ কিছু করিনি। কিন্তু আমাদের রাজ্যের দিকে তাকিয়ে দেখুন। প্রতিবছর গাদা গাদা পতি (‌যেমন তেমন পতি নয়, শিল্পপতি)‌ আসছে আর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কিন্তু আমি যেমন রিপ্রোডাকশন করি না। ওরাও তেমনি প্রোডাকশন করে না। শিল্পপতিদের যদি দোষ না হয়, তাহলে ঘরের পতির দোষ হবে কেন?‌
বউ আরও বলে, তোমাকে রেঁধে বেড়ে খাওয়ানোটাই ভুল। জীবনে কোনও সুখ পেলাম না। গায়ে দুবার হাত বুলিয়েই তোমার দম শেষ হয়ে যায়। আমার বাবা কি এইজন্যই বিয়ে দিয়েছিল?‌

ambani2

লে হালুয়া। নিজের পতির দোষ সবাই দেখে। শিল্পপতির দোষ কেউ দেখে না। এই তো ষোল–‌সতেরো দুদিন ধরে শিল্পপতিদের রেঁধে বেড়ে খাওয়ানো হল। বছর বছর খাওয়ানো হয়। আমি যেমন শ্বশুরের কাছে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। ওরাও কত প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু না হয় প্রোডাকশন, না হয় রিপ্রোডাকশন। তার মানে কি খাওয়ানোটা ভুল?‌ এই যে সজ্জন জিন্দাল ইস্পাতের কারখানা করব বলে সিমেন্টের কারখানা করল, তাতেই তার দম শেষ। বউয়ের গায়ে দুবার হাত বুলিয়ে আমার দম শেষ যদি দোষ হয়, তাহলে সজ্জনের দোষ হবে না কেন?‌ সে সজ্জন, আমি কি দুর্জন?‌ আমার শ্বশুর, থুড়ি আমার দিদি কি এই জন্য তাকে জামাই আদর করে রাজ্যে এনেছিল?‌

বউ আরও বলে, এই রকম ধ্বজভঙ্গ পুরুষের সঙ্গে থাকার থেকে পরপুরুষের সঙ্গে থাকা ভাল। জীবনে অন্তত একটা সুখ তো পাওয়া যাবে।
হ্যাঁ, এই একটা ব্যাপারে আমি বউয়ের সঙ্গে একমত। প্রতিশ্রুতি নেই, রাঁধা, বাড়া, খাওয়া, বাজার করা, আপ্যায়ন–‌কোনওকিছুর ঝঞ্ঝাট নেই। সেই যে দিদি ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল, ফটাফট কারখানা হবে আর সটাসট চাকরি হবে। এমনটা করে দেখিয়ে দে তো শিল্পপতিরা। অবৈধ প্রেমিক যেমন বলা নেই, কওয়া নেই, সুযোগ পেলেই আসল কাজটা সেরে ফেলে, তেমনি তোরাও সম্মেলন, প্রতিশ্রুতি এইসব বাদ দিয়ে একটা কারখানা বানিয়ে ফেল তো।

প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস করলে অন্যায়, প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস না করলেও অন্যায়। কিন্তু প্রতিশ্রুতি না দিয়ে সহবাস করলে?‌ না, কোনও অন্যায় হয় না। বরং, উভয়পক্ষই খুশি হয়। দুজন দুজনকে ভালবাসি, তাই সহবাস করি। এর মধ্যে আবার প্রতিশ্রুতি কী?‌ তোরাও তেমনি প্রতিশ্রুতি–‌ফুতি না দিয়ে, সহবাস, থুড়ি কারখানা করে ফেল তো। দেখি তোরা কেমন পতি। মানে, শিল্পপতি।
যদি করতে না পারিস, তাহলে বাঙালি কিন্তু তোদেরও ধ্বজভঙ্গ বলবে। আমার বউ আমাকে যেমন বলে।

flipkart-strip

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.