বাংলা ছবি লোপাকে ব্যবহার করতেই পারল না

ধামাধরাদের ভিড়ে অনেকটাই স্বতন্ত্র। তাঁর গানও স্বতন্ত্র। বাংলা ছবি কি সেভাবে ব্যবহার করতে পারল লোপামুদ্রাকে?‌ কারা সঙ্গীত পরিচালনা করেন, তাঁরা কী চান, জানতে খুব ইচ্ছে করে। লোপামুদ্রাকে খোলা চিঠি। লিখলেন বৃষ্টি চৌধুরি।।

আমাদের বেড়ে ওঠা আর আপনার গানের বেড়ে ওঠা প্রায় সমসাময়িক। আমাদের বেড়ে ওঠা মূলত নয়ের দশকে। বাংলা গান কোন খাতে চলছে, বোঝার মতো বয়স তখন হয়নি। যা গান চারপাশে বাজত, তাই শুনতাম। বড় পিসি শুনতেন পুরানো বাংলা গান। আবার ছোট কাকা তখনকার নানা হিন্দি ছবির হিট গান। দুরকম গানই কানে আসত। গুনগুন করে সাজনের গানও গাইতাম, আবার লতা-সন্ধ্যার গানও গাইতাম।

সুমন তখন কিছুই বুঝতাম না। ভালও লাগত না। তুলনায় নচিকেতা বেশি নাড়া দিয়েছিল। মেয়েদের মধ্যে তখন অনেকেই রিমেক গাইতেন। বেশ কয়েকটা নাম মনে আছে। একটু একটু করে শুনলাম আপনার গান। একদিন মঞ্চেও আপনার অনুষ্ঠান দেখলাম। হারমোনিয়াম নিয়ে বসে গান গাওয়া নয়। একেবারে যেন অন্য একটা ঘরানা।

lopamudra2

তখন লিটল ম্যাগে দু একটা কবিতা লেখার হাতেখড়ি। অনেক কবিদের নাম জেনে ফেলেছি। হঠাৎ দেখলাম, জনপ্রিয় কবিতাগুলি একে একে গান হয়ে উঠছে। আবার আসিব ফিরে থেকে বেনীমাধব। শুরুতে কিছুটা খটকা লাগত। পরে দেখলাম, কানে দিব্যি সয়ে গেল। জীবনানন্দ বেঁচে থাকলে ‘আবার আসিব ফিরে’ শুনতে তাঁরও ভালই লাগত।

খুব আক্ষেপ করতাম, বাঙালি কবিতা শোনে না। কিন্তু সেই কবিতা বিমুখ বাঙালিই যেন একটু একটু করে কবিতাকে ভালবাসতে শিখল। কিছুটা কৃতিত্ব যদি ব্রততীর হয়, তবে গানের জগতে সেই কৃতিত্ব আপনাকেই দিতে হয়। আরও একজনের কথা বলতেই হয়, যিনি সবসময় আড়ালে থাকতেই ভালবাসেন, সেই সমীর চট্টোপাধ্যায়।

আপনার গানের সঙ্গে ওই নামটাও জড়িয়ে আছে। অথচ, মানুষটাকে সত্যিই কোনওদিন টিভিতে বা অন্য কোথাও আসতে দেখিনি। কোথাও তাঁর কোনও সাক্ষাৎকার পড়েছি বলেও মনে করতে পারছি না। তবে আপনার মুখে বারবার ওই নামটা শুনি। ভাল লাগে, খ্যাতি পেয়েও, প্রতিষ্ঠা পেয়েও ওই আড়ালের মানুষটাকে আপনি ভোলেননি। বারবার কৃতজ্ঞ চিত্তে তুলে আনছেন সেই মানুষটার নাম।

মাঝে মাঝে খুব কষ্ট হয়, আবার রাগও হয়। বাংলা ছবি আপনাকে সেভাবে ব্যবহারই করতে পারল না। ‘সেদিন চৈত্রমাস’ ছবির কথা মনে পড়ছে। আপনার কণ্ঠে অসাধারণ একটা গান দিয়েছিলেন সুমন—‘সূর্য তাকেই দেখতে চায়, আকাশ তাকেই ডাক পাঠায়।’ গানটি যেন আপনার জন্যই তৈরি হয়েছিল। কিন্তু পরে আর সেভাবে ব্যবহার করা হল না কেন ? কারা সঙ্গীত পরিচালনা করেন, তাঁরা কী চান, জানতে খুব ইচ্ছে করে।

গানের বাজারটাও দিনদিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। ডাউনলোডের দুনিয়ায় সিডি কেনা কমে এসেছে। কলেজে বা পাড়ায় সেই অনুষ্ঠানের চলও দেখি না। কারণ, কলেজে ভোট না করিয়ে যারা ক্ষমতায় আসছে, তারা আর যাই হোক, লোপামুদ্রার গান শুনবে না। সেই শিক্ষা, সেই রুচি কোনওটাই তাদের নেই। পাড়া বা ক্লাবে অনুষ্ঠানের যারা হোতা, সেই মানুষগুলোও তো বদলে গেছে। তারাই কি লোপামুদ্রা শোনে ? মনে হয় না। সংস্কৃতির দুনিয়ায় বড় তাড়াতাড়ি যেন একটা শূন্যতা নেমে এল। ধামাধরাদের ভিড়ে আপনাকে সেদিনই স্বতন্ত্র মনে হত, আজও তাই মনে হয়।
হতাশ হবেন না লোপা। আপনি যেমন আছেন, তেমনই থাকুন। গান নিয়ে নতুন নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যান। শুনলাম, কবিতা নিয়ে নাকি আর গান করবেন না। হয়ত হতাশা থেকে বলেছেন। হয়ত না ভেবেই বলেছেন। প্লিজ লোপা, কবিতা থেকে গান গাওয়া বন্ধ করবেন না। চাই, সেই কবিতাগুলো বেঁচে থাক, নতুন করে প্রাণ ফিরে পাক আপনার কণ্ঠে।

(‌সংস্কৃতি ও বিনোদনকে এবার থেকে আরও বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বেঙ্গল টাইমসে। আপনার প্রিয় শিল্পীকে নিয়ে আপনিও লিখতে পারেন। গানের জগতের কোনও অজানা দিক নিয়ে কলম ধরতে পারেন। পাঠিয়ে দিন bengaltimes.in@gmail.com ‌এই ঠিকানায়)‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.