পরিবেশপ্রেমী?‌ মোটেই না, এঁরা আসলে মামলাবাজ

বাঙালি আর ডুয়ার্সে যেতে পারবে না?‌ সব বাংলো ভেঙে ফেলতে হবে?‌ পরিবেশ রক্ষার নামে এ কেমন অনাচার?‌ আর যাই হোক, এঁদের পরিবেশপ্রেমী বলা যায় না। এঁরা মামলাবাজ, এটাই বড় পরিচয়। লিখেছেন সরল বিশ্বাস।। 

বেঙ্গল টাইমসে খবরটা পড়েই মন খারাপ হয়ে গেল। বাঙালি আর ডুয়ার্সে যেতে পারবে না?‌ গেলেও সেখানে থাকতে পারবে না?‌ বাঙালির বেড়ানোর মানচিত্র থেকে জয়ন্তী, রাজাভাতখাওয়া, বক্সা— এই জায়গাগুলো হারিয়ে যাবে?‌ মন থেকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।
পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে, এ নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। কিন্তু কেউ কেউ এটাকে নিয়ে অহেতুক বাড়াবাড়িও করছেন। চারপাশে এত নোঙরা, এত আবর্জনা, এত দূষণ। এসব তাঁদের চোখে পড়ে না। ভাল কিছু হলেই সেটা আটকাতে এঁরা উঠে–‌পড়ে লাগেন। ময়দানে বইমেলা হলে এঁদের যত আপত্তি। যেন বইমেলা উচ্ছেদ করতে পারলেই দূষণ নিয়ে আর সমস্যা থাকবে না। আসলে, দূষণ রয়ে গেছে মনে। দূষণ চিন্তা–‌চেতনায়। যাঁরা কথায় কথায় এসব মামলা করছেন, জানতে ইচ্ছে করে সেই সুভাষ দত্তদের বাড়ির আশপাশের এলাকা পরিষ্কার আছে তো?‌ আগে নিজের পাড়া সামলান, এলাকা সামলান। সেখানে পরিচ্ছন্নতা দেখান। তারপর বইমেলা বা ডুয়ার্স নিয়ে দরদ দেখাবেন।
ডুয়ার্সে জঙ্গলের ভেতর কয়েকটা কটেজ রয়েছে। এতে কার কী এল গেল?‌ এর জন্য পরিবেশ খারাপ হয়ে গেল?‌ মনে রাখবেন, ইংরেজরা আমাদের থেকে অনেক বেশি পরিবেশ সচেতন ছিলেন। পরিবেশের কথা মাথায় রেখেই প্রাচীন এই বনবাংলো গুলো তৈরি হয়েছিল। এত বছরের এত ঐতিহ্যশালী বাংলো–‌কটেজ, সেগুলো ভেঙে ফেলতে হবে?‌ এ নিয়ে কারও কোনও উচ্চবাচ্য নেই?‌

buxa
বক্সা টাইগার রিজার্ভ ফরেস্টের ভেতর সমস্ত নির্মাণ নাকি ভেঙে ফেলতে হবে। এর মধ্যে রাজাভাতখাওয়া, জয়ন্তী, বক্সাও পড়ছে। জয়ন্তীকে বলা হয় ডুয়ার্সের রানি। কত ইতিহাস জড়িয়ে আছে, কত ছবির শুটিং হয়েছে। কে কোথাকার সুভাষ দত্ত মামলা করলেন বলে সব হোটেল ভেঙে ফেলতে হবে?‌ মানুষ জঙ্গলে ঘুরতে যাবে না?‌ সেখানে থাকতে পারবে না?‌ আসলে, এঁরা শুধুই মামলাবাজ। একজন পর্যটকের মানসিকতা, দৃষ্টিভঙ্গি, আবেগ— কোনওকিছুই এঁরা বোঝেন না। তাই মনের সুখে মামলা করে বেড়ান। নতুন কিছু তৈরি করার মুরোদ নেই। কোনওকিছুতে বাগড়া দিতে পারলেই যত আনন্দ।
আর যাই হোক, এঁদের পরিবেশপ্রেমী বলা যায় না। এঁরা মামলাবাজ, এটাই বড় পরিচয়। আমি আশাবাদী, কিছু না কিছু একটা উপায় ঠিক বেরোবে। আবার আমরা জঙ্গলে ঘুরতে যাব। জয়ন্তীর ওই চর দিয়ে আবার ভোরবেলায় হেঁটে বেড়াব। রাজাভাতখাওয়ার ওই মৃদু অরণ্যে, গায়ে আলতো রোদ মেখে হেঁটে বেড়াবো।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.